বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
মুহতারাম দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব দীর্ঘদিন থেকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মরহুম অধ্যাপক ইউসুফ আলী ছাত্রজীবন শেষ করে মৌলভীবাজার কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসাবে ১৯৬৫ সালে যোগদান করেন। জনাব মতলিব তখন ঐ কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি অধ্যাপক ইউসুফ আলী সাহেবের সংস্পর্শে এসে ছাত্র ইসলামী আন্দোলনে অগ্রসর হন। তিনিই সর্বপ্রথম মৌলভীবাজারে ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের গোড়াপত্তনের অন্যতম। আরো কিছুদিন পর মৌলভীবাজারের মনু প্রজেক্টের তদারকী করার জন্য আসতেন Associate Consulting Engineers Firm এর প্রধান ইনজিনিয়ার জনাব খুররমজা মুরাদ। জনাব মুরাদ ঐ সময়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী শাখার আমীর ছিলেন। জনাব মতলিব ঐ সময় মুরাদ সাহেবের সংস্পর্শে আসেন এবং সাংগঠনিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
তিনি ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের ইউনিট থেকে আরম্ভ করে কেন্দ্ৰীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের দীর্ঘদিনের সাবেক আমীর মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের পরামর্শ ছিল ছাত্র নেতারা ছাত্রজীবন শেষ করে, নিজের জিলার বৃহত্তম ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করবেন এবং জিলা সংগঠন মজবুত করবেন। সাবেক আমীরে জামায়াতের পরামর্শ মোতাবেক দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব নিজ জিলা মৌলভীবাজারে বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত
মৌলভীবাজারের জিলা আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জিলায় সর্বত্র সংগঠন ছড়িয়ে দেন এবং সংগঠন মজবুত করেন। বর্তমানে তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারী হয়েছে।
অসুস্থতা ও বয়সের কারণে তিনি Actively
সংগঠনের সব কাজে যোগদান করতে পারছেন না-কিন্ত মনে প্রাণে সংগঠনের
সাথে জড়িয়ে আছেন।
তিনি জামায়াতের বিভাগীয় অঞ্চল টীমের সদস্য। সংগঠনের কার্যক্রম তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তাঁর পর্যবেক্ষন থেকে তিনি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন
এবং সাংগঠনিক লাইনের বই পুস্তক লিখেন ৷
তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে “ইসলামী সংগঠন ও আমরা” বইটি রচিত হয়েছে। এ বইতে তিনি ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তিকে যে পরামর্শ প্রদান
করেছেন--- এ পরামর্শ মোতাবেক কাজ করলে ইসলামী আন্দোলন দিন দিন অগ্রসর হতে থাকবে
ইনশাআল্লাহ। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
পরিশেষে এ মুনাজত আমরা সবাই আমরণ ইসলামী আন্দোলনে শরীক থেকে মহান মাবুদের কাছে ফিরে যেতে পারি। -আমীন
অধ্যাপক ফজলুর রহমান
কিছু কথা
আমরা নামাজ, রোজা,
হজ্ব, যাকাতকে যেভাবে ফরজ মনে করি। সেভাবে ইকামতে দ্বীনকে অর্থাৎ দেশে ইসলামী রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার জন্য। কাজ করাকে অনেকেই ফরজ মনে করি না। কিন্তু আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম দ্বীন কায়েমের জন্য আমাদেরকে নির্দেশ। দিয়েছেন। দ্বীন কায়েমের এ ফরজ আদায় করতে হলে
সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই এ ফরজ আদায় হবে এবং আমরা মহান আল্লাহর নিকট নাজাত পাব। এ ব্যাপারে আমরা সাধারণ মুসলমান যাতে সচেতন হতে পারি এবং
সংগঠনের জনশক্তি সে গুনাবলী অর্জন ও দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হতে পারি এ লক্ষ্যেই
আমার সামান্য লিখা।
বৃহত্তম সিলেটের প্রবীন সংগঠক ও দায়িত্বশীল, লেখক ও গবেষক মুহতারাম অধ্যাপক ফজলুর রহমান সাহেব লিখাটুকু সংশোধন করেছেন
এবং অভিমত দিয়েছেন, এ জন্য উনাকে অশেষ শুকরীয়া জানাচ্ছি।
মহান আল্লাহ বইটিকে কবুল করুন এবং আমাদেরকে ইকামতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব
দেওয়ান মনজিল
শাহ মোস্তফা রোড, মৌলভীবাজার-৩২০০
মোবাইল: ০১৭১১-২৮৩২২৬
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ইসলামী সংগঠন ও আমরা
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সৃষ্টি
করেছেন। আমাদের মর্যাদা হলো আমরা আল্লাহর খলিফা বা
প্রতিনিধি। প্রতিনিধি নিজের ইচ্ছামত কাজ করার অধিকার
নেই। যার প্রতিনিধি তাঁর ইচ্ছামত কাজ করতে হবে। এ জন্য যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁদের নিকট জীবন বিধান পাঠিয়েছেন, সে বিধান অনুসারে মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন, মানুষকে
সংগঠিত করে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে মানুষকে তৈরীর মাধমে সমাজ পরিবর্তনের
চেষ্টা করেছেন। রাসূল (সঃ) এর অবর্তমানে
এ দায়িত্ব তাঁর উম্মতের উপর অর্পিত হয়েছে।
“সৃষ্টি যার আইন তার।” (সুরা আল আ'রাফঃ ৫৪) এজন্য নবী রাসূলগণ
আল্লাহ প্রদত্ত আইন বা বিধান প্রতিষ্ঠিত করে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ
সাধনের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আমাদের
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পথে চলার
দাওয়াত দিয়েছেন, যারা দাওয়াত গ্রহণ করেছেন, তাদেরকে সংগঠিত করেছেন।
প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অনেক জুলুম নির্যাতন ও
ত্যাগ তিতীক্ষার পর মদীনাতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে মানবতার কল্যাণ সাধন
করেছেন। আমাদের নবী শেষ নবী, আর দুনিয়াতে কোন নবী আসবেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত আমরা। নবীর তরিকা অনুসারে আমাদেরকে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করে দুনিয়াতে মানুষের
কল্যাণ সাধন করতে হবে, ইহাই আমাদের দায়িত্ব। এ কাজ করলেই আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করা হবে এবং
মহান আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করে দেবেন আর চিরস্থায়ী জান্নাত দান করবেন।
এ কাজ একা করা সম্ভব নয়, কোন নবী রাসূল একাকী এ কাজ করেন নাই। তাই সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের মাধ্যমে এ কাজ করতে হবে। ইসলাম কায়েমের জন্য প্রিয় নবীর পদ্ধতি অনুসারে যে সংগঠন কাজ করে তাকেই
ইসলামী সংগঠন বলে। সংঘবদ্ধ প্রচেষ্ঠার মাধ্যমেই আমাদেরকে
খেলাফতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে হবে। ইহা
এমন কোন কাজ নয় যে আমরা ইচ্ছা হলে করবো আর ইচ্ছা না হলে করবো না।
এ কাজ করা আমাদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার
নির্দেশ। এ কাজের জন্যই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী
রাসূল পাঠিয়েছেন। সুরা আস-সফের ৯নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ “তিনিই সেই সত্তা যিনি তার রাসূলকে হিদায়ত ও দ্বীনে হক দিয়ে পাঠিয়েছেন। যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্যান্য সকল দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন।” এর পরে একই সুরার ১০-১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “হে
ঈমানদারগণ আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দিবো যা তোমাদেরকে কঠিন
আযাব থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি
ঈমান আনো এবং আল্লাহর পথে অর্থ সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো। এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন সব
বাগানে প্রবেশ করবেন যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে। আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান
করবেন। এটাই বড় সফলতা।
আর আরেক জিনিস যা তোমরা আকাঙ্খা করো আল্লাহ
তাও তোমাদেরকে দেবেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং অতি
নিকটবর্তী সময়ে বিজয়। হে নবী
ঈমানদারকে এর সুসংবাদ দান করো।”
সংগঠন সম্পর্কে আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা হলে “তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে (অর্থাৎ
ইসলামকে) আঁকড়ে ধর। (সূরা আল
ইমরানঃ ১০৩)
সংগঠন সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে পাঁচটি
বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি আল্লাহ আমাকে ঐ গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। (বিষয়গুলো হচ্ছে) সংগঠন, নেতৃ
নির্দেশ শ্রবণ, নেতৃ নির্দেশ পালন, হিজরত
ও আল্লাহর পথে জিহাদ। সে
ব্যক্তি ইসলামী সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেছে সে নিজের গর্দান
থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলেছে, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন
করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর সে
যদি জাহিলিয়াতের দিকে আহবান জানায় সে জাহান্নামী। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! সালাত কায়েম ও সাওম পালন করা সত্ত্বেও?
“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, সালাত কায়েম, সাওম
পালন এবং মুসলিম দাবী করা সত্ত্বেও।” [হারিছ আল আশ'আরী রা. থেকে বর্ণিত। তিরমিযী, আস সুনান, কিতাবুল আমছাল, হাদীস নম্বরঃ ২৭৯০; আহমদ, আল মুসনাদুল হারিছ আল আশআরী হাদীস নম্বরঃ
১৬৫৪২, ১৭১৩২; আল হাকিম, আল মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম, হাদীস
নম্বরঃ ৩৭১, কিতাবুল ছাওম, হাদীস নম্বরঃ
১৪৮২]
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আরও বলেন, “তিনজন লোক কোন নির্জন প্রান্তরে থাকলেও
একজনকে আমীর না মানিয়ে থাকা জায়েজ নয়।” আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে বর্ণিত।
“তিনজন লোক সফরে বের হলে তারা যেন তাদের
একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়।” আবু
হুরাইয়া রা. থেকে বর্ণিত।
“যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম অংশে বসবাস
করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন সংগঠনকে আঁকড়ে ধরে।” আল মুসনাদ, হাদিসঃ ১১২৬
“যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।” আহমদ, আল মুসনাদ, হাদিস
নম্বরঃ ৫২১২, ৬১৩৫
সংগঠন সম্পর্কে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.
বলেন,
“সংগঠন ছাড়া ইসলাম নেই, নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন নেই, আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্ব নেই।” আল মুকাদ্দামাহ্, হাদিস নম্বরঃ ২৫৭
আমরা যদি আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের ব্যাপারে চিন্তা করি তাহলে আমাদের নিকট
স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে যে মুসলমানদেরকে জামায়াতবদ্ধ ভাবে জীবন যাপন করতে হবে। আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য সংগঠনভূক্ত হয়ে আপ্রাণ
চেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি জামায়াতবদ্ধ না হই, তাহলে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশের
সুস্পষ্ট লংঘন।
আমরা অনেক সময় কিছু ঈমানদারদের মুখে শুনে
থাকি যে আমি কোন দল করি না। ইহা কি
ঠিক হলো? মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে জামায়াতবদ্ধ
থাকতেই হবে এবং সাংগঠনিকভাবে আমাদেরকে দ্বীনের কাজ করে যেতেই হবে। নামাজ যেমন ফরজ তেমনি ভাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার
চেষ্টা করাও ফরজ। এ ফরজ পালন একা একা করা সম্ভব নয়, তাই সাংগঠনিকভাবেই এ কাজ করতে হবে। এ কাজ যদি আমরা না করি তাহলে দুনিয়াতে শান্তি স্থাপন হবে না, মানবতার কল্যাণ করা যাবে না তাহলে আখেরাতে জান্নাতে যাব কিভাবে? তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া
পদ্ধতি অনুসারে আমাদেরকে এ কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের অধিকারী হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
ইসলামী সংগঠনে আসার পর আমাদেরকে প্রথমে যে
কাজটি করতে হবে তাহলো আমরা সংগঠন সম্পর্কে জানবো, সংগঠনের
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি? কিভাবে কাজ করতে হবে? সংগঠনের কর্মনীতি কি? তার কর্মপদ্ধতি
কি? এ গুলো যদি আমরা না জানি তাহলে আমি সঠিক ভাবে কাজ করতে
পারবো না এবং সংগঠনে অগ্রসর হতেও পারবো না। হয়তো সংগঠনের পরিচয়ে আমি এমন এমন কাজ করে ফেলতে পারি যা সংগঠনের কর্মনীতি ও
কর্মপদ্ধতির খেলাফ। তাই আমার কাজ কর্মে
সংগঠনের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশী। আমার
উপর দ্বীনের যে দায়িত্ব তা আঞ্জাম হবে না। নেকির
পরিবর্তে গোনাহ হয়ে যাবে। ইসলামী
সংগঠনে আসার পর আমাকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আমাদেরকে আল্লাহর সম্পর্কে জানতে হবে। রিসালত ও আখেরাত সম্পর্কে জানতে হবে। ইসলাম
মানুষের জীবনের আংশিক কোন বিধান নয়, তা একটি
পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই
ইসলামের বিভিন্ন ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে। আমরা নিজেরা যদি না জানি তাহলে মানুষের নিকট ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছাতে
পারবো না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জীবন বিধানের গাইড বুক
হিসাবে আমাদের নিকট কুরআন পাঠিয়েছেন, সেই কুরআন
অনুসারে আমরা কিভাবে জীবন যাপন করবো। কিভাবে
আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাবো, তার সঠিক পদ্ধতি
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বাস্তবে করেছেন এবং তা
উম্মতের জন্য রেখে গেছেন। এ
সম্পর্কে আমাদেরকে পড়াশুনা করতে হবে। আমরা
যদি অনেক দিন যাবত সংগঠনে থাকি অথচ পড়াশুনা না করি তাহলে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে
কোন ফায়দা হবে না এবং সংগঠনেরও কোন লাভ হবে না। আমরা যদি নিয়মিত কুরআন ও হাদিস বুঝে পড়ি তাহলে আমরা দেখবো এক বছর আমরা অনেক
কিছু জানতে পেরেছি। কুরআন ও হাদিস পড়ার সাথে
সাথে আমরা যদি চিন্তা করি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল আমাকে কি বলছেন, আমি কি এভাবে আমল করছি বা কাজ করছি। আমি যদি এভাবে না চলি তাহলে নিজকে সংশোধন করতে পারবো না। এ কাজের মধ্যেই আমার দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। তাছাড়া সবই অকল্যাণ এবং শয়তানের দেখানো পথ। কুরআনে ইবাদত বন্দেগী, ব্যক্তিগত, পারিবারিক,
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,
বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ইত্যাদি সম্পর্কে যে
দিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমাকে জানতে হবে। আমরা যদি শুধু ব্যক্তিগত কিছু ধর্মীয় বিধি বিধানের মধ্যে
আবদ্ধ থাকি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা
ও কাজ না করি তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূর্ণভাবে
অনুসরণ করা হবে না, অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” (সুরা আল আহযাবঃ ২১) তাই আমাদেরকে পড়তে হবে, জানতে হবে, মানতে হবে। আমরা অনেকে মনে করি, আমার পড়াশুনা করার সময়ের খুব অভাব। এ আসল কাজে যদি আমরা সময় ব্যয় করতে না পারি, তাহলে আমাদের জীবনের সময় কোন কাজে লাগবে? আমরা যদি
দৈনিক কিছু সময় কুরআন বুঝে পড়ি, কমপক্ষে একটি হাদিস পড়ি,
কিছু ইসলামী সাহিত্য পড়ি, তাহলে দেখবো এক বছরে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমাদের জীবন সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে।
আমরা যদি আমাদের টেবিলে কুরআনের তাফসীর রাখি, হাদিস গ্রন্থ রাখি, ইসলামি সাহিত্য রাখি, তাহলে দেখবো আমাদের পড়াশুনা হবে ইনশাআল্লাহ। তাই সংগঠনে আসার পর আমাদেরকে পড়তে হবে। পড়াশুনা করলে ইনশাআল্লাহ আমরা অনেক মর্যাদার অধিকারী হতে পারবো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণে
কোন রাস্তায় চলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করেন। ফেরেস্তাগণ ইলম অন্বেষনকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের পাখা
বিছিয়ে দেন। ইলম অর্জন কারীর জন্য আসমান সমূহ ও যমীনে
অবস্থিত সকল কিছু দোয়া করে। এমন কি
পানিতে অবস্থিত মৎস্য রাজিও। একজন
আবেদের তুলনায় একজন আলেমের এতখানি শ্রেষ্ঠত্ব আছে, যতখানি
শ্রেষ্ঠত্ব পূর্ণিমার রাতে তারকারাজির তুলনায় পূর্ণচন্দ্রের জন্য রয়েছে। আলিমগণ হলেন নবীদের ওয়ারিশ। নবীগণ টাকা পয়সার উত্তরাধিকার রেখে যান না। তারা উত্তরাধিকার রেখে যান ইলমে দ্বীনের। কাজেই যে ব্যক্তি এ ইলম লাভ করে, সে অফুরন্ত
কল্যাণ লাভ করে” (ইমাম আবু দাউদ, হাদীসঃ ৩৬৪১- ৩৬৪২; ইমাম তিরমিযী, হাদীসঃ ২৬৮২, ইমাম ইবনে মাজা, হাদীসঃ ২২৩, ইমাম ইবনে হিব্বত, হাদীসঃ ৮৮, ইমাম রায়হাকী, হাদীসঃ
১৬৯৬-১৬৯৭, মুনযিরী, হাদীসঃ ১০৬,
পৃষ্টাঃ ২৫)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও
বলেছেন, “হযরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আবুযর প্রত্যহ
আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা করা একশত রাকায়াত নফল নামাজ আদায় করা
থেকেও উত্তম। অনুরুপ প্রত্যহ জ্ঞানের
একটি অধ্যায় শিক্ষা করা-এ শিক্ষার উপর কেউ আমল করুক কিংবা না করুক-এক সহস্র রাকাত
নফল নামাজ পড়া থেকেও উত্তম। (ইমাম
ইবনে মাজা, হাদীসঃ ২১৯, মুনাযিরী,
হাদীসঃ ১১৬, পৃষ্টাঃ ২৭)
হযরত আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলামঃ
হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর
ভয় ও তাকওয়া অবলম্বন কর। এটি
হলো সকল কর্মকান্ডের মস্তক। আমি
বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আরোও উপদেশ দিন, তিনি বললেন তুমি কুরআন তিলাওয়াত অব্যাহত
রাখ। কারণ এটি ভূপৃষ্টে তোমার জন্য হবে জ্যোতি, আর আসমানে তোমার জন্য হবে সঞ্চিত সম্পদ। (ইমাম ইবনে হিব্বান, আস সহীহ, হাদীসঃ ১২৪,
মুনযিরী, হাদিসঃ ২১০৫, পৃষ্টাঃ ২৮৬) তাই
ইসলামী সংগঠনে কাজ করা এবং সংগঠন পরিচালনার জন্য আমাদেরকে যথেষ্ট পড়াশুনা করতে
হবে। কুরআন পড়ার পর যদি একটু চিন্তা করি এবং
কিছু লিখার চেষ্টা করি যে আজকে পড়াশুনার মধ্যে কি পেলাম, তাহলে অনেক কিছুই আমাদের মনে থাকবে। আমরা যে ইসলামী সংগঠনে কাজ করবো বা দুনিয়ার জীবনে বিভিন্ন
কাজ করবো, তার উদ্দেশ্য কি? কি
জন্য আমরা কাজ করবো, আমাদের কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাহলে
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অশেষ কল্যাণ দান করবেন। আর আমাদের কাজের উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি না হয়
তাহলে আল্লাহর নিকট আমরা কোন প্রতিদান পাবো না। কাজ করতে গিয়ে যদি মনের কোণে এ উদ্দেশ্য থাকে যে মানুষ আমার প্রশংসা করবে, মানুষ আমাকে সম্মান করবে, মানুষ আমার পক্ষে আসবে,
জনমত আমার পক্ষে গড়ে উঠবে এবং এ জন্য আমি জনসেবা করি, সভা-সমিতিতে যাই, কারো মৃত্যু হলে জানাযায় হাজির হই,
মানুষকে দান করি, বিচার ফয়ছলা করি, মনের মধ্যে এ নিয়ত যে এ সমস্ত কাজ করলে মানুষের নিকট আমি পরিচিত হব,
নির্বাচনে মানুষ আমাকে ভোট দিবে, তাহলে তো
আল্লাহর নিকট আমার কিছু পাওয়ার নেই। এ
কাজগুলো যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি এবং কাজ করার নিয়ত থাকে যে এ
কাজগুলো করলে মহান আল্লাহর আমার উপর খুশী হবেন।
আল্লাহর বান্দা হিসাবে সবার হক আদায় করার
চেষ্টা করি এবং তা যেন মহান আল্লাহ কবুল করেন, এ দোয়া করি
তাহলে আল্লাহর নিকট আমরা সফলতার অধিকারী হব। ফলে আল্লাহ পাক স্বাভাবিকভাবেই আমি যা চাই, তা আমাকে
দেবেন। মানুষের নিকট পরিচিত হব, মানুষ এমনি আমাকে সম্মান করবে, মানুষের কল্যাণ করলে
ভোট এমনিই আমি পাব। তাই
আমরা যারা ইসলামী সংগঠনে কাজ করি এ ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নের হাদীসটি পড়লে আমাদের সবার মনই আঁতকে উঠবে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম
এমন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে, যে শহীদ
হয়েছিল। তাকে আল্লাহর আদালতে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে দেয়া নিয়মত গুলো স্মরণ করিয়ে দেবেন। যাবতীয় নিয়ামতের কথা তার স্মরণ পড়বে। এখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি আমার
নিয়ামত গুলো পেয়ে কী কাজ করেছো? সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তোমার দ্বীনের বিরুদ্ধে লড়াইতে
লিপ্তদের সাথে যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি যে বললে আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
করেছো এ কথা ভুল বলেছো। তুমি
যুদ্ধ করেছ শুধু এ জন্য যে, লোকেরা তোমাকে বীর ও সাহসী বলবে। সেটা বলা হয়েছে এবং দুনিয়াতেই তুমি তার প্রতিদান পেয়ে
গেছো। অত:পর হুকুম দেয়া হবে যে, এই স্বকথিত শহীদকে মুখ নীচের দিক দিয়ে টেনে নিয়ে যাও এবং জাহান্নামে
নিক্ষেপ করো। তৎক্ষনাৎ তাকে টেনে টেনে
নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এর পর দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তি আসবে আল্লাহর
আদালতে। সে ছিল ইসলামের বিশিষ্ট পন্ডিত তথা আলেম, শিক্ষক ও কুরআন অধ্যায়নকারী তাকে আল্লাহর তার দেয়া নিয়ামতগুলো স্মরণ
করিয়ে দেবেন। লোকটির যাবতীয় নিয়ামতের
কথা মনে পড়বে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, এতো সব নিয়ামত পেয়ে তুমি কি কাজ করেছো? সে বলবে হে
আল্লাহ, আমি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তোমার দ্বীন শিখেছি,
তোমার সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে তা অন্যকে শিখিয়েছি এবং তোমার জন্য
কুরআন পড়িয়েছি।
আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমিতো
এ জন্য কেবল ইসলামের জ্ঞান অর্জন করছো যেন লোকেরা তোমাকে একজন আলেম বলে। আর কুরআর তুমি এজন্য শিখেছো, যেনো
জনগণ তোমাকে কুরআনের জ্ঞানী বলে। তোমার
এ আশা দুনিয়াতেই মিটে গেছে এবং লোকেরা তোমাকে আলেম ও ক্বারী বলেছে। এরপর হুকুম দেয়া হবে যে, ওকে মুখ
নিচের দিক দিয়ে টেনে টেনে নিয়ে যাও এবং জাহান্নামে ফেলে দাও। তৎক্ষনাৎ তাকে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় ব্যক্তি হবে দুনিয়ার ধনাঢ্য ব্যক্তি। যাকে আল্লাহ বিপুল প্রাচুর্য ও রকমারি অঢেল সম্পদ দান
করেছেন।
তাকে হাজির করার পর আল্লাহ তাকে দেয়া
নিয়ামতের কথা স্মরণ করাবেন। সকল
নিয়ামতের কথা তার মনে পড়বে এবং সে স্বীকার করবে যে, এ সকল নিয়ামত তাকে দেয়া হয়েছিল। এরপর তার প্রতিপালক তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার
নিয়ামতগুলো পেয়ে তুমি কী করেছো? সে বলবে সে সব খাতে খরচ
তুমি পছন্দ করো, সে সব খাতে তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে খরচ
করেছি, আল্লাহতায়ালা বলবেন তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি সমস্ত সম্পদ এ জন্য দান করেছিলে যেন
লোকে তোমাকে দানশীল বলবে। এ উপাধি তুমি দুনিয়াতে
পেয়ে গেছো। এরপর আদেশ করা হবে যে, ওকে মুখ নিচের দিক দিয়ে টেনে নিয়ে আগুনে ছুড়ে মারো। তাকে তৎক্ষনাৎ আগুনে ফেলে দেয়া হবে।” (মুসলিম)
তাই আমাদের যাবতীয় কাজ কর্মের উদ্দেশ্য যদি
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ না হয়, তাহলে আখেরাতে আমরা
দুর্ভাগ্যের অধিকারী হবো। কাউকে
সাহায্য সহযোগিতা করলে একমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্যই করতে হবে।
এ ব্যাপারে হযরত আবু বকর রা. এর একটি ঘটনা। মক্কায় যে সব অসহায় গোলাম ও বাদীরা ইসলাম
গ্রহণ করেছিলেন এবং এ অপরাধে তাদের মালিকরা তাদের ওপর চরম অকথ্য নির্যাতন ও
নিপীড়ন চালাচ্ছিল। হযরত আবু বকর রা.
মালিকদের জুলুম থেকে বাঁচানোর জন্য তাদের কিনে নিয়ে আজাদ করে দিচ্ছিলেন। ইবনে জাবীর ও ইবনে আসাকির হযরত আমের ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে
সুরাইয়ের এ রেওয়াতটি উদ্ধৃত করেছেনঃ
হযরত আবু বকর রা. এভাবে গরীব দাস ও দাসীদের
গোলামী মুক্ত করার জন্য অর্থ ব্যয় করতে দেখে তাঁর পিতা তাঁকে বললেন যে, পুত্ৰ! আমি
দেখছি তুমি দুর্বল লোকদের মুক্ত করে দিচ্ছো। যদি
তুমি এ টাকা শক্তিশালী জোয়ানদের মুক্ত করার জন্য খরচ করতে তাহলে তারা তোমার হাতকে
শক্তিশালী করতো। এ কথায় হযরত আবু বকর রা.
তাঁকে বললেন, আব্বাজান আমিতো আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান
চাই। (তাফহীমুল কুরআন, সুরা আল লাইলঃ টিকা-১০)।
আমরা কোন কাজ করলে নিজকে পরীক্ষা করতে
পারি-সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলো না তার নিকট কিছু প্রতিদান পাওয়ার জন্য
হলো। আমি যদি কোন ব্যক্তির
উপকার করি তা হলে সে শুকরিয়া আদায় করলো কি না, তাতো তার
দায়িত্ব। কিন্তু আমার তো চিন্তা থাকবে যে আমি আল্লাহর
নিকট প্রতিদান পাওয়ার জন্য তা করলাম। ধরুন, আমরা অনেক সময় আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী,
সহকর্মী বা অসহায় কোন মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করি। আমার মনে যদি আসে যে সে সব সময় আমার অনুগত থাকবে। তাহলে এই কাজটি কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলো? সে ব্যক্তি কোন সময় আমার বিপক্ষে গেলে আমি যদি বলি, তার জন্য এত কিছু করলাম কিন্তু সে নিমকহারাম, আমার
পক্ষে সে নেই। তাহলে
কি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলো? আমি যদি আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তা হলে ঐ ব্যক্তি যাই করুক,
আমার তো কিছু আসে যায় না, আমিতো তার নিকট কোন
প্রতিদানের জন্য করি নাই। আমিতো
করেছি আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার জন্য, তাহলে ঐ ব্যক্তি
কি করলো না করলো তার জন্য আমার মনে কোন কষ্ট আনা কি ঠিক?
তাই আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়
সব কাজ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। তাহলেই আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
আমরা যারা ইসলামী সংগঠনে এসেছি আমাদের
ব্যক্তিগত জীবনের ইবাদত বন্দেগী চালচলন, পারিবারিক ও
সামাজিক জীবনে ইসলামের বিধান অনুসারে আমল করতে হবে অর্থাৎ কাজ করতে হবে। সবার অধিকারে প্রতি নজর দিতে হবে। নতুবা আমার কার্যকলাপের কারণে একটি ইসলামী সংগঠনের দুর্নাম হয়ে যাবে। আমি যখন কোন ইসলামী সংগঠনে কাজ করি, আমি যখন ঐ সংগঠনের মানুষ হিসাবে পরিচিত হই, তখন আমার
ব্যক্তিগত কার্যকলাপে ঐ সংগঠন এফেক্ট করে। আমি যদি পারিবারিক জীবনে ইসলামী আমল আখলাকের অধিকারী না হই, তাহলে আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ভাই বোন ঐ সংগঠন
সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবে। আমি
ইসলামী সংগঠনের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবো। আমি
যদি আমার স্বামী বা স্ত্রীর হক আদায় না করি, ছেলেমেয়েদেরকে
স্নেহ-মমতা না করি, বোনের হক আদায় না করি, পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির তার অংশ তাকে না দেই, পাড়া
প্রতিবেশী ও আত্মীয়তার হক আদায় না করি, তাহলে আমার কাজে কি
কেউ আকৃষ্ট হবে? আরো বিরুপ ধারণার সৃষ্টি হবে। আমি যদি দোকান থেকে মাল বাকী এনে টাকা না দেই, কর্জ এনে কর্জ পরিশোধ না করি, আমার লেনদেন শরীয়ত
সম্মত না হয়, তাহলে আমার দ্বারা দ্বীনের কি কাজ হবে?
আমি কি আল্লাহর নিকট নাজাত পাব? এ ব্যাপারে
আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। আমরা
যদি শ্বশুর বাড়ীর সাথে লেনদেন করি, এমন কোন ঝামেলার
সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের সম্পর্কে ঘাটতি ঘটে, আমার শ্বশুর
বাড়ী আমি সম্মানিত মেহমান, তা আমার স্ত্রীর বাপের বাড়ী,
আমার ছেলেমেয়েদের নানার বাড়ী, মামার বাড়ী,
সবারই একটি মায়া মহব্বতের জায়গা। কিন্তু আমার লেনদেনের কারণে সবার সম্পর্কের মধ্যে একটি ফাটল ধরবে। তাই এ সমস্ত ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করতে হবে। অনেক সময় আমরা যৌথ ব্যবসা বাণিজ্য করি। কিন্তু আমানতদারীর অভাবে সংগঠন থেকেই অনেক দূরে চলে যেতে
হয়। এতে আমাদের দুনিয়া
আখেরাতের অনেক ক্ষতি হয়। আমি একজন দ্বীনদার
মহিলার কথা শুনলাম, যিনি উনার মেয়েকে সংগঠনের একজন
দায়িত্বশীলের নিকট বিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি উক্তি করলেন, আমার দ্বিতীয় মেয়েকে সংগঠনের কোন লোকের
নিকট বিয়ে দেব না। আরেক জন মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেমের স্ত্রী বলেলেন, আমার কোন
মেয়েকে কোন আলেমের নিকট বিয়ে দেব না। এমনি নামাজি একজন ছেলে দেখবেন। তার কারণ কি? নিশ্চয়ই তাদের আচার আচরণে তারা জর্জরিত। যদিও সংগঠনের সবাই বা সব আলেম দোষী নয়, কিন্তু দেখুন! ব্যক্তির আচরণে কিভাবে মানুষের মন
মানসিকতা এফেক্ট করে। তাই আমরা
যারা সংগঠনে এসেছি আমাদেরকে দ্বীনের উপর সঠিকভাবে গড়ে উঠতে হবে এবং চিন্তা ভাবনা
করে কাজ করতে হবে। আমরা যেন আল্লাহর দ্বীনের সংগঠনের
প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়াই।
“খোদার পথে যারা কাজ করেন তাদের উদার হৃদয় ও
বিপুল হিম্মতের অধিকারী হতে হবে। সৃষ্টির প্রতি সহানুভুতিশীল ও মানবতা দরদী হতে হবে। তাদের হতে হবে ভদ্র ও কোমল স্বভাব সম্পন্ন, আত্মনির্ভরশীল
ও কষ্ট সহিষ্ণু, মিষ্টভাষী ও সদালাপী। তাদের দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হবে এমন কোন ধারণা যেন কেউ
পোষণ করতে না পারে এবং তাদের নিকট থেকে কল্যাণ ও উপকার সবাই কামনা করবে। তারা নিজেদের প্রাপ্যের চাইতে কমের উপর সন্তষ্ট থাকবে এবং
অন্যকে তার প্রাপ্যের চাইতে বেশী দিতে প্রস্তত থাকবে। তারা মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দিবে অথবা কমপক্ষে মন্দ দিয়ে দেবে না। তারা নিজেদের দোষত্রুটি স্বীকার করবে এবং অন্যের গুণাবলীর
কদর করবে। তারা অন্যের দুর্বলতার প্রতি নজর
না দেবার মত বিরাট হৃদয়ের অধিকারী হবে। অন্যের
দোষত্রুটি ও বাড়াবাড়ি মাফ করে দেবে এবং নিজের জন্য কারো থেকে প্রতিশোধ নেবে না। তারা অন্যের সেবা গ্রহণ করে নয় বরং অন্যকে সেবা করে
আনন্দিত হবে। তারা নিজের স্বার্থে নয় বরং অন্যের ভালোর
জন্য কাজ করবে। কোন প্রকার প্রশংসার অপেক্ষা না করে এবং কোন
প্রকার নিন্দাবাদের তোয়াক্কা না করে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাবে। খোদা ছাড়া আর কারোর পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি দেবে না। তাদেরকে বল প্রয়োগে দমন করা যাবে না। সম্পদের বিনিময়ে ক্রয় করা যাবে না। কিন্ত
সত্য ও ন্যায়ের সামনে তারা নির্দ্বিধায় ঝুঁকে পড়বে। তাদের শত্রুরা তাদের উপর বিশ্বাস রাখবে যে, কোন
অবস্থায়ই তারা ভদ্রতা ও ন্যায়নীতি বিরোধী কোন কাজ করবে না। এ চারিত্রিক গুনাবলী মানুষের মন জয় করে নেয়। এ গুলো তলোয়ারের চাইতেও মূল্যবান। যে এহেন চারিত্রিক গুণাবলী অর্জনকারী সে তার চারপাশের জনবসতির ওপর বিজয় লাভ
করে। কোন দল পূর্ণাঙ্গরূপে এ গুনাবলীর অধিকারী
হয়ে কোন মহান উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সুসংবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে দেশের পর দেশ
তার করতলগত হতে থাকে এবং দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় না। (ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী, পৃষ্টাঃ ২০-২১)।
আমরা যারা ইসলামী সংগঠনে এসেছি, আমাদেরকে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করতে হবে। আমরা অনেক সময় আমাদের স্ত্রী, ঘরের মহিলা ও
কাজের লোক ও ছোট ছেলেমেয়েদেরকে সালাম করি না। অনেকেই মনে করি তারা আমাকে সালাম করবে।
সালামকে আমরা একটি সম্মানের ব্যাপার মনে করি। সাধারণ মানুষকে সালাম করা অনেক সময় আমরা লজ্জা মনে করি। অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মদীনায় আসার পর প্রথম যে খুতবা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে ছিল,
“নিজেদের মধ্যে সালাম প্রসারিত করো।”
তিনি আরো বলেছেন, “তোমরা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতোক্ষণ না
মুমিন হবে, আর ততোক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতোক্ষণ না পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু সন্ধান দেব না, যা গ্রহণ করে
তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে? তা হচ্ছে এই যে, তোমরা নিজেদের মধ্যে সালাম প্রসারিত করো। (মুসলিমঃ আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “সালামের সুত্রপাতকারী হচ্ছে আল্লাহর রহমত
থেকে অধিকতর নিকটবর্তী লোকদের অন্যতম। “সালামের সূচনাকারী অহংকার থেকে বেঁচে থাকে।” বিশেষভাবে তিনি পরিবারের লোকদের সালাম করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। হযরত আনাস রা. কে বলেছেনঃ হে বৎস, যখন তুমি নিজ ঘরে প্রবেশ করো, সবাইকে সালাম করো। এটা তোমার এবং তোমার পরিবারের লোকের জন্য কল্যাণকর হবে।” (তিরমিযীঃ আনাস রা. হতে বর্ণিত)
একটি বিষয় আমাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া
প্রয়োজন। সাংসারিক জীবনে আমাদেরকে মানুষের সাথে অনেক
লেনদেন করতে হয়। আমরা অনেক সময় ঋণ করে থাকি, সে ঋণ আমাদের লিখে রাখতে হবে বা আমাদের পরিবারের কাহারও জানা থাকা
প্রয়োজন। কোন সময় কি অবস্থায় যে কার মৃত্যু হবে
আমরা বলতে পারি না। তাই ঋণ যদি লিখা থাকে বা কারো জানা থাকে
তাহলে মৃত্যুর পর তা পরিশোধের সুযোগ থাকে।
ঋণ সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরিশোধ করার পূর্ণ সংকল্প
নিয়ে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ জাল্লা শানুহু তার ঋণ পরিশোধের পথ সহজ করে দেন। আর যে ব্যক্তি আত্মসাতের নিয়তে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে
ধ্বংস করে দেন। (ইমাম বুখারী, হাদীসঃ
২৩৮৭, ইমাম ইবনে মাজা, হাদীসঃ ২৪১১, মিশকাত,
পৃষ্টাঃ ২৫২)।
এরপর আলী রা. ঐ ব্যক্তিকে কথাগুলো শিখিয়ে
দিলেন। “আল্লাহুম্মাক ফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা,
ওয়া আগনিনি বি ফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।” অর্থাৎ হে আল্লাহ হারামের পরিবর্তে হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো,
আর তোমাকে ছাড়া আমাকে আর কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং তোমার অনুগ্রহ
দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করো।
(তিরমিযি, হাদিসঃ ৩৫৬৩, মসনদে
আহমদঃ ১৩২১)।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, যাতে তিনি ঋণে জড়িয়ে না পড়েন। হযরত আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পরে দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ!
আমি তোমার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে পানাহ চাচ্ছি। এক প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ঋণ থেকে বেশী পানাহ চান কেন?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্থ হলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা ভঙ্গ করে। (বুখারী, হাদিসঃ ২৩৯৭)
হাদিসে ঋণ থেকে মুক্তির আরো একটি দোয়া
রয়েছে। “আল্লাহ হুম্মা ইন্নি আইজুবিকা মিনাল হাম্মি
ওয়াল হাযমি ওয়াল আযমি ওয়াল কাচালি ওয়াল বুখলি ওয়াল ঝুবনি ওয়া দালায়িদ-দাইনি
ওয়া গালাবাতির রিঝালি।”
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি দুঃচিন্তা পেরেশানি থেকে
আশ্রয় চাই, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই; কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই; ঋণভার ও লোকজনের
প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট মুক্তি চাই। (বুখারী, হাদিসঃ ২৮৯৩)
সামাজিক জীবনে বিপদ, আপদ ও প্রয়োজনে পরস্পর পরস্পরকে ঋণ দিয়ে সাহায্য করা খুবই সওয়াবের কাজ। তাই ঋণ লেনদেনে নির্দিষ্ট তারিখ থাকা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট তারিখে দেয়া সম্ভব না হলে পরবর্তী তারিখ ঠিক
করতে হবে। ঋণদাতা ও সহানুভুতিশীল হওয়া প্রয়োজন এবং
ঋণ গ্রহিতাও আপ্রাণ চেষ্টা করা ও আল্লাহতায়ালার নিকট দোয়া কর প্রয়োজন। নতুবা পরস্পরের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ, দুঃচিন্তা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হবে। পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। এতে
পরস্পর পরস্পরকে ঋণ দেয়ার উৎসাহ নষ্ট হয়ে যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে
উত্তমরপে ঋণ পরিশোধ করে”।
হযরত মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
মসজিদে (নববী) এর সম্মুখে অবস্থিত জানাজার জায়গায় বসা ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে
উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা দেখলাম, তিনি
আকাশের দিকে চোঁখ তুলে তাকালেন। তারপর দৃষ্টি অবনত করে কপালে হাত রেখে বললেন, সুবহান
আল্লাহ! সুবহান আল্লাহ! কী কঠিন বিষয় অবতীর্ণ হলোঃ বর্ণনাকারী বললেন, আমরা একদিন ও এক রাত চুপ থাকলাম। এ সময়ের মধ্যে ভাল ছাড়া মন্দ কিছুই দেখলাম না। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বলেন, অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, (ইয়া
রাসুলুল্লাহ!) কঠিন কি বিষয় নাযিল করা হয়েছে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঋণ সম্পৰ্কীয় কঠিন
বিধান। শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ। যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হয়। তারপর পূনর্জীবিত হয়ে আল্লাহর পথে শহীদ হয়। তারপর
পুনর্জীবিত হয়ে আবার আল্লাহর পথে শহীদ হয় (অর্থাৎ তিন বার আল্লাহর পথে শাহাদাতের
মর্যাদা লাভ করে)। অথচ তার জিম্মায় অনাদায়ী ঋণ থেকে যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার সেই ঋণ আদায় বা
পরিশোধ করা হয়। (মিশকাত)
আরো একটি হাদীস হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (মৃত্যুর পর) মুমিনের আত্মা ঋণের দায়ে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ
পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে সেই ঋণ আদায় না করা হয়। (ইমাম আহমদ, পৃষ্টাঃ ৪৪০, ইমাম তিরমিযি, হাদিসঃ ১০৭৮)
তাই ঋণের ব্যাপারটা আমাদেরকে হালকাভাবে নেয়া
ঠিক নয়-আমরা যাতে ঋণমুক্ত জীবন কাটাতে পারি সেজন্য মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য
চাওয়া প্ৰয়োজন।
একবার এক লোক ঋণ পরিশোধের জন্য ইসলামের
চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা. কাছে কিছু সাহায্য চাইলে, আলী রা.
তাকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাকে কয়টি শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আমি কি তোমাকে সেটা শিখিয়ে দেব? সেটা পড়লে আল্লাহ তোমার ঋণ মুক্তির দায়িত্ব নেবেন-তোমার ঋণ যদি পর্বত
প্রমাণ হয় তাহলেও।
“কেউ যেন ঋণ পরিশোধে গড়িমসি না করে, সে জন্য বলেছেন, “ঋণ পরিশোধ না করা কবিরা গুনাহের
অন্তর্ভূক্ত।”
আমাদের দেশে বিবাহের সময় স্ত্রীর মহরানা
প্রায়ই বাকী থাকে। তাও ঋণ। এ ব্যাপারেও আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।
আমরা যারা ইসলামী সংগঠনে আছি, আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যকে ভালবাসতে হবে। একে অন্যের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে,
অসুখ-বিসুখে আমরা জড়িত হবো, খোঁজ খবর নিবো,
একে অন্যকে অগ্রসর করার চেষ্টা করবো, দোষত্রুটি
ধরা পড়লে তা সংশোধনের চেষ্টা করবো। সময়
সুযোগে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করবো, যে কোন সময়
আমরা মোবাইলেও যোগাযোগ করতে পারি।
সংগঠনের জনশক্তির সব সময় একটি মহব্বতের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ভালবাসবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমরা রহমত ও বরকতের অধিকারী হবো।
এ ব্যাপারে একটি হাদীস আমরা স্মরণে রাখতে
পারি
এক ব্যক্তি ভিন্ন গাঁয়ে অবস্থিত তার এক
ভাইয়ের সাথে মোলাকাত করতে চললো। আল্লাহতায়ালা তার চলার পথে একজন ফিরিশতা নিযুক্ত করলেন। ফিরিশতা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কোথায়
যাবেন?” সে বললো, “অমুক গ্রামে আমার
ভাইয়ের সঙ্গে মুলাকাত করতে যাচ্ছি।” ফিরিশতা আবার জিজ্ঞাস করলেন, “তার কাছে কি আপনার
কিছু পাওনা আছে, যা আদায় করতে যাচ্ছেন “ সে বললো, না, “আমি শুধু
আল্লাহর জন্য তাকে ভালবাসি, এ ছাড়া আর কোন কারণ নেই।” ফিরিশতা বললেন, “আল্লাহ্ আমাকে আপনার
কাছে পাঠিয়েছেন এবং এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে আপনি যেমন তাঁর খাতিরে আপনার বন্ধুকে
ভালোবাসেন, তেমনি তিনিও আপনাকে ভালোবাসেন।” (মুসলিমঃ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত।)
ইসলামী সংগঠনের আসার পর আমাদেরকে দুইটি মান
রক্ষা করে চলতে হবে। তাহলে
আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে উন্নতি হবে এবং সংগঠনেরও অগ্রগতি হবে। প্রথম হচ্ছে ব্যক্তিগত মান। সংগঠন আমাকে গঠন করার জন্য যে পরিকল্পনা দেয় তা আমাকে মেনে চলতে হবে। যেমন সংগঠন একটি সিলেবাস দিয়ে থাকে সে অনুসারে পড়াশুনা
করা, কুরআন পড়া, হাদীস পড়া, ইসলামি সাহিত্য পড়া, জামায়াত নামাজ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, রিপোর্ট রাখা, দিনের শেষ নিজের
ব্যাপারে আত্মসমালোচনা করা।
কাজগুলো যদি আমরা করি দিনের পর দিন আমার ব্যক্তিগত জীবনের উন্নতি হবে। এক বছর পর আমরা হিসাব নিকাশ করলে বুঝতে পারবো যে সংগঠনের পরিকল্পনা
অনুযায়ী চলার কারণে আমি অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি। আমার ব্যক্তিগত মানের উন্নতি হবে।
আর সাংগঠনিক মান হলো আমি সংগঠনের যে শাখায়
আছি, সেখানকার সাপ্তাহিক ও মাসিক বৈঠকে যোগদান, সংগঠনের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে যোগদান এবং সংগঠন আমাকে যে কাজ দেয়,
তা আন্তরিকতার সাথে আঞ্জাম দেয়া। তাহলে আমার ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক মান দু’টোই রক্ষা হবে।
তাছাড়া আমি যদি বহুদিন যাবত সংগঠনে থাকি এবং ব্যক্তিগত মান ও সাংগঠনিক মান আমার
না বাড়ে, তাহলে আমি কোনদিন আল্লাহর দ্বীনের কাজে
অগ্রসর হতে পারবো না, নিজের দায়দায়িত্বও পালন হবে না। এর জন্য যে খুব সময় দিতে হবে-তা নয়, আমাকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে যে, এ কাজ করার পর
আমার অন্যান্য সব কাজ করবো। আমার সব কাজ করে সময় পেলে তা করবো এভাবে মনে করলে কোন দিন আল্লাহর দ্বীনি আন্দোলনের
হক আদায় করতে পারবো না। আমাকে যে সব সময় দিতে
হবে তা নয়। সংগঠনের বৈঠকের সময়
আমাকে সময় দিতে হবে। তখন
আমার কাজ আমি পরে করবো। ইহা
করলেই হয়। আমাকে একটি রুটিনের অধীনে থাকতে হবে। আমায় সংগঠনের প্রদত্ত ব্যক্তিগত কাজ, সংগঠনের কাজ, আমার রুজি রোজগারের কাজ সবকিছুর একটি
সমন্বয় করলেই আমরা দেখতে পাবো, আমার দ্বারা সব কাজই হচ্ছে। আল্লাহর নিকট তাওফিক চাইলে আল্লাহ তাওফিক দান করবেন।
ইসলামী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে নিয়ে জিলা, উপজিলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন,
ওয়ার্ড পর্যন্ত সংগঠনকে প্রসারিত করতে হবে। প্রত্যেক স্তরের শাখা সংগঠনের তিনটি কাজ করতে হয়। ১নং উর্ধ্বতন কাজ, ২নং নিজ সংগঠনের
কাজ ৩নং নিম্নতম সংগঠনের কাজ। উর্ধ্বতন
সংগঠন থেকে যে পরিকল্পনা, প্রোগ্রাম ও নির্দেশ আসে তা বাস্তবায়ন
করতে হয়। নিজ শাখার নিয়মিত কাজ করতে হয় এবং অধস্তন
সংগঠনের কাজের তদারক করতে হয়, কাজ আদায় করতে হয়। এভাবে কাজ চলতে থাকলেই সংগঠন মানগত হয় এবং সব সময় কাজের
অগ্রগতি হতে থাকে।
ইসলামী সংগঠনে পদলোভিদের স্থান নেই। কারো মনে পদ পাওয়ার আকাংখা থাকে না। আকাংখা থাকলে এ ধরণের দায়িত্বশীল আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হন। সংগঠনের পদ্ধতি অনুসারে কাহার উপর দায়িত্ব আসলে বাধ্য
হয়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। ইসলামী
সংগঠন একক কোন ব্যক্তি বা দায়িত্বশীলের ইচ্ছায় চলে না। শুরার মাধ্যমে পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং তা কার্যকারী করতে হয়। সংগঠনের মধ্যে গ্রুপিং থাকলে তা ইসলামী সংগঠন হয় না। সংগঠনে সব একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করা হয়, কোন বিষয়ে সব একমত হতে না পারলে অধিকাংশের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়ে কাজ
করতে হয়। ইসলামী সংগঠনের আয় ব্যয় কঠোরভাবে সংরক্ষণ
করা হয়। আমানতদারীর ব্যাপারে খিয়ানত হলে, এ সংগঠন আর ইসলামী সংগঠন হিসাবে সঠিক মানে থাকে না। ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলগণ ভুলের উর্ধ্বে নয়। ভুল ধরে দিলে খুশী মনে আন্তরিকতার সহিত সংশোধন হওয়ার
চেষ্টা করতে হয়।
ইসলামী সংগঠনে নেতার আনুগত্য করতে হয়। আনুগত্য ছাড়া ইসলামী সংগঠন চলতে পারে না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! আল্লাহর আনুগত্য কর,
রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে উলিল আমর তার আনুগত্য
কর।” (সূরা আল নিসা-৫৯)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। যে ব্যক্তি আমাকে অমান্য করলো, সে আল্লাহকেই অমান্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করলো, সে আমারই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্য হলো, সে আমারই
অবাধ্য হলো”। (আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত) এ ব্যাপারে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা হলোঃ “স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে সৃষ্টির আনুগত্য করা চলবে না। আনুগত্য শুধু মারুফ কাজের।”
ইসলামী সংগঠনের কাজ সব সময়ই সুশৃঙ্খলভাবে
চলে। কোন সভা, সম্মেলন বা
মিটিং যখন দায়িত্বশীল আহবান করেন, তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি
যথাসময়েই সে প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে হয়।
কোন অসুবিধা থাকলে পূর্বেই ছুটি নিতে হয়। বৈঠকের মধ্যে যদি কোন অসুবিধা দেখা দেয়, তখন দায়িত্বশীলের নিকট থেকে ছুটি নিতে হয়। বৈঠকের পরও সংশ্লিষ্ট অনেক কাজ থাকে। তাই
বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ দায়িত্বশীলের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। এভাবেই ইসলামী সংগঠনে দায়িত্বশীলের আনুগত্য করে চলতে হয়।
কেউ যদি বলেন আমার খুব অসুবিধা, আমি বৈঠকে আসতে পারছি না, তিনি নিজকে নিজেই ছুটি
দিয়ে দেন, তাহলে ছুটি হবে না। দায়িত্বশীলকে অসুবিধা বলতে হবে, তখন তিনি যদি
ছুটি দেন, তাহলেই ছুটি হবে। বৈঠকের মাঝখান থেকে ইচ্ছামত চলে গেলে হবে না। এতে যে গোনাহ হবে, সে অনুভুতি আমাদের থাকতে হবে।
মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “মুমিন তো আসলে তারাই যারা অন্তর থেকে আল্লাহ ও তার রাসূলকে মানে এবং যখন
কোন সামষ্টিক কাজে রাসূলের সাথে থাকে তখন তার অনুমতি ছাড়া চলে যায় না। যারা তোমার কাছে অনুমতি চায় তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে
বিশ্বাসী। কাজেই তারা যখন তাদের কোন কাজের জন্য তোমার
কাছে অনুমতি চায়, তখন যাকে চাও তুমি অনুমতি দিয়ে দাও এবং এ
ধরণের লোকদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করো। আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও করুনাময়।” (সূরা আন নূরঃ ৬২)
অর্থাৎ “নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে তার স্থলাভিষিক্তগণ এবং ইসলামী জামায়াত
ব্যবস্থার আমীরগণের জন্যও একই বিধান। কোন সামগ্রীক
উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বা শান্তি যে কোন সময় মুসলমানদের যখন একত্র করা হয় তখন আমীরের
অনুমতি ছাড়া তাদের ফিরে যাওয়া বা ছড়িয়ে পড়া কোনক্রমেই জায়েজ নয়। এর মধ্যে এ সতর্কবাণী রয়েছে যে, কোন যথার্থ প্রয়োজন ছাড়া অনুমতি চাওয়া আদতেই অবৈধ। বৈধতা কেবল তখনই সৃষ্টি হয় যখন যাবার জন্য কোন প্রকৃত
প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রয়োজন বর্ণনা করার ও
অনুমতি দেয়া না দেয়া রাসূলের এবং রাসূলের পর জামায়াতের আমীরের ইচ্ছার উপর
নির্ভর করে। তিনি যদি মনে করেন সামগ্রিক প্রয়োজন
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তুলনায় বেশী গুরুত্বপূর্ণ তাহলে অনুমতি
না দেয়ার পূর্ণ অধিকার তিনি রাখেন। এ
অবস্থায় একজন মুমীন এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকা উচিত নয়।
এখানে আবার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, অনুমতি চাওয়ার মধ্যে যদি সামান্যতম বাহানাবাজীরও দখল থাকে অথবা সামগ্রীক
প্রয়োজনের ওপর ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেবার প্রবণতা সক্রিয় থাকে,
তাহলে তা হবে একটি গোনাহ। কাজেই রাসূল ও তাঁর স্থলাভিষিক্তের শুধুমাত্র অনুমতি দিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে
না বরং যাকেই অনুমতি দেবেন সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলে দেবেন যে, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন।” (তাফহিমুল কুরআন, সুরা আন নূরঃ ৯৮-১০১ টীকা)
তাই যে সংগঠনে আনুগত্য নেই, সে সংগঠন দ্বীন কায়েমের জন্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ হয় না। যে সংগঠনে পদ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়, ব্যক্তি স্বার্থে কাজ হয়, পরামর্শ ভিত্তিক কাজ হয়
না, ব্যক্তি ভিত্তিক ও পরিবারতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল,
নেতার ভূল ধরা যায় না, নেতাকে পরামর্শ দিলে
বেয়াদবী মনে করা হয়।
অর্থনৈতিক সঠিক হিসাব নিকাশ থাকে না, সংগঠনের
জনশক্তির মানোন্নয়নের কোন কর্মসূচী থাকে না, বাতিলের সাথে
আপোষ করে চলে, এ ধরণের সংগঠন নামে ইসলামী সংগঠন হলেও তা আসলে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা অনুসারে বাস্তবে ইসলামী
সংগঠন নয়।
মানুষ হিসাবে আমাদের অনেক দোষত্রুটি থাকে। কিন্ত আমরা যারা ইসলামী সংগঠনে এসেছি, আল্লাহতায়ালা আমাদের দ্বীনের কাজ করার তাওফিক দিয়েছেন। আমাদেরকে এ সমস্ত
ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। যেমন অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ। অন্যের যে অধিকার আছে, যে হক আছে, তাতে যেন
আমরা কোন হস্তক্ষেপ না করি।
প্রত্যেকের হক কি জানি এবং তা আদায় করার চেষ্টা করি। কাহাকেও গালাগালি করা, কটু ভাষায় কথা বলা এবং ঠাট্টা বিদ্রোপ করা
তা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কোন কটুভাষা এবং বদ স্বভাব
বিশিষ্ট ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (আবু দাউদ)
“কিয়ামতের দিন আমার দৃষ্টিতে সবচাইতে
অভিশপ্ত এবং আমার থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে বাচাল, অশ্লীল
ভাষী, ইলমের মিথ্যা দাবীদার ও অহংকারী ব্যক্তিগণ (তিরমিযি)।
আমরা কখনও গীবত করবো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “গীবত হচ্ছে এই যে, তোমার ভাইয়ের পছন্দনীয় নয়,
এমনভাবে তা চর্চা করা। বলা
হলো, আমার ভাইয়ের মধ্যে যদি উল্লেখিত খারাবী বর্তমান থাকে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যদি এমন খারাবীর কথা উল্লেখ করো, যা তার
বর্তমান রয়েছে, তবে তা তো গীবত করলে। আর তার মধ্যে যদি তা বর্তমান না থাকে, তো তার ওপর অপবাদ
চাপিয়ে দিলে। (মুসলিম, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত)
মহান আল্লাহ বলেন, “কেউ কারো গীবত করোনা, তোমরা কি আপন মৃত ভাইয়ের গোশত
খাওয়া পছন্দ করবে? একে তো তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।” (সুরা আল হুজুরাতঃ ১২)
ছোগলখুরীও গীবতের একটি রূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। কাহারও দোষ খুঁজে বেড়ানোও আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। কূরআনে বলা হয়েছে, “আর দোষ খুঁজে বেড়িয়ো না” (সূরা আল হুজুরাতঃ ১২)
এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “মুসলমানদের দোষ খুঁজে বেড়িয়োনা। কারণ যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ ও গুনাহ
খুঁজতে থাকে, আল্লাহ তার গোপন দোষ ফাঁস করতে লেগে যান। আর আল্লাহ যার দোষ প্রকাশ করতে লেগে যান, তাকে তিনি অপমান করেই ছাড়েন- সে তার ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকুক না কেন।” (তিরমিযি, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত)
কাউকে ঠাট্টা বা উপহাস করতে এবং কাউকে
তুচ্ছজ্ঞান করতেও মহান আল্লাহ আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। অনুমান করে কথা বলাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাধি। প্রচলিত অর্থে অনুমান বলতে বুঝায় এমন একটি ধারনাকে, যার পিছনে কোন সুস্পষ্ট কোন সাক্ষ্য প্রমাণ বা প্রত্যক্ষ জ্ঞান নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অনুমান পরিহার করো, কেননা, অনুমান হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যা কথা।” (বুখারী, মুসলিম, আবু হুরায়রা রা.)
আমরা এমন কথাবার্তা বলা কখনও ঠিক নয়, সে কথা দ্বারা কোন মুসলমান ভাইয়ের মনের মধ্যে কষ্ট হয়। রাসূল বলেছেন- “যে কোন
মুসলমানকে কষ্ট দিলো, সে আল্লাহকেই কষ্ট দিলো,” (“তিরমিযী: আনাস রা. হতে বর্ণিত)
অন্যকে হিংসা করা ও একটি ঘৃণ্য ব্যাধি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো কারণ আগুন যেমন লাকড়িকে খেয়ে ফেলে, হিংসা ঠিক তেমনি নেকী ও পূণ্যকে খেয়ে ফেলে।” (আবু দাউদ, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত)।
রাগ মানব জীবনের একটি বড় দোষ। রাগের কারণে অনেক সময় আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক এবং সাংগঠনিক জীবনে অনেক অঘটন ঘটে যায়। তাই রাগকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বলবান সে নয় যে কুস্তিতে অন্যকে পরাজিত করে, বরং বলমান সে যে রাগের সময়
নিজকে নিয়ন্ত্রণ করে।” (বুখারী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, “রাগ শয়তান থেকে সৃষ্ট, আর শয়তান আগুন থেকে সৃষ্ট, আগুনকে নিভানো যায় পানির
সাহায্যে, কাজেই তোমাদের কেউ রাগান্বিত হলে তখন সে যেন (পানি
দ্বারা) ওজু করে নেয়। তাহলে
রাগ দূরীভুত হয়ে যাবে।” রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন রেগে যায়, আর সে দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে, তখন সে যেন বসে পড়ে। এতে যদি রাগ প্রশমিত হয় তবে ভাল নতুবা সে যেন শুয়ে পড়ে।” (আবু দাউদ)
আল্লাহর দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে আল্লাহর
সন্তষ্টির জন্য যারা ইসলামী সংগঠনে কাজ করেন, মহান আল্লাহ তার
প্রতিদান হিসাবে তাদেরকে জান্নাত দেবেন। অর্থাৎ তাদের শেষ ঠিকানা হবে জান্নাত। এত
বিরাট নিয়ামত জান্নাত দিতে হলে আল্লাহ পরীক্ষা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, “লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ কেবলমাত্র এতটুকু বললেই তাদেরকে
ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি, আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।” (সূরা আনকাবুতঃ ২-৩) সুরা বাকারাঃ ২১৪ নং আয়াতে আল্লাহ
তায়ালা বলেন, “তোমরা কি মনে করেছো তোমরা জান্নাতে প্রবেশ
করে যাবে, অথচ এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি, যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল, তোমাদের পূর্ববর্তী
(ঈমানদারগণ), তারা সম্মুখীন হয়েছিল নির্মমতা ও দুঃখ ক্লেশের এবং তাদেরকে অস্থির
করে তোলা হয়েছিল। এমন কি রাসূলের সাথে
যারা ঈমান এনেছিলেন তারা চিৎকার করে বলেছিল আল্লাহ সাহায্য কবে আসবে? তখন তাদেরকে সুখবর দেয়া হয়েছিল এই মর্মে যে, জেনে রাখ আল্লাহর সাহায্য
নিকটেই।”
তাছাড়া আল্লাহ আরোও বলেছেন, “আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের
পরীক্ষা করবো। এ অবস্থা যারা সবর করে
এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে
হবে। তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে
দাও।” (সূরা আল বাকারাঃ ১৫৫-১৫৬)
মুমিনদের পরীক্ষা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদী। সাআ’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ হে আল্লাহর রাসূল, মানুষের মাঝে সর্বাধিক
পরীক্ষার সম্মুখীন হন কোন লোকেরা? জবাবে তিনি বলেনঃ সর্বাধিক
বিপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হন নবীগণ, তার পর দ্বীনের ক্ষেত্রে
সবচেয়ে অগ্রগামী যারা, তারপর যারা অগ্রগামী তারা।
প্রত্যেক (মুমিন) ব্যক্তি তার ঈমানের মজবুতি
ও পূণ্যশীলতার আধিক্য অনুপাতে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। যে (মুমিন) ব্যক্তি তার দ্বীনি মজবুতির দিক থেকে যতো মজবুত হয়, তার পরীক্ষাও তুলনামূলক হারে ততোটাই কঠিন হয়। আর যে তার দ্বীনের ক্ষেত্রে দুর্বল হয়, তার দ্বীনি
মজবুতির অনুপাতেই সে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়।
এভাবে (মুমিন) বান্দা বিপদ ও পরীক্ষা
সম্মুখীন হতে হতে শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে একেবারে নিস্পাপ অবস্থায় কদম ফেলে। (তিরমিযি, হাদিসঃ ২৪০১)
তাই আমরা যারা ইসলামী সংগঠনে আছি, আমাদের পরীক্ষা দিতে হবে। আল্লাহ পরীক্ষা দেন, আমাদের উন্নতির জন্য, দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের কল্যাণের জন্য। বিপদ আপদ, মুছিবত, জালিম
সরকারের পক্ষ থেকে নির্যাতন, জেল, জুলুম,
খুন, গুম এ গুলো আসবে। এ গুলোকে পরীক্ষা মনে করে, আমরা যদি
পাশ করার চেষ্টা করি, সবর করি, ধৈর্য
ধরে মবজুত থাকি এবং অবস্থা যা-ই হউক না কেন, আমরা যদি দৃঢ়
থাকি, তাহলে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতের
কল্যাণ দান করবেন।
আর যদি আল্লাহর দেয়া এ পরীক্ষাকে বিপদ মনে
করে হতাশ হয়ে যাই, সংগঠনের কাজে পিছিয়ে যাই, যদি মনে করি সমস্যা দূর হয়ে গেলে কাজ করবো-এখনতো আমি সমস্যায় আছি। তাহলে আল্লাহর পরীক্ষায় ফেইল করা হবে। আল্লাহ পরীক্ষা দিলেন উন্নতির জন্য আর আমরা বিপদ মনে করে
পিছিয়ে চলে আসলাম। তাহলে কোনদিন জীবনের
সফলতা আসবে না। বিপদ, আপদ মুছিবত যতই
আসুক, আমাদেরকে কাজ বাড়িয়ে দিতে হবে, অগ্রসর হতে হবে। তাহলেই আল্লাহ কল্যাণ দান করবেন। আল্লাহ
বিপদ দিয়ে যেভাবে পরীক্ষা করেন, ধন সম্পদ দিয়ে, জালিম সরকারের পক্ষ থেকে, বাতিলের পক্ষ থেকে অনেক
অফার দিয়েও বান্দাকে পরীক্ষায় ফেলেন। তাই আল্লাহ পরীক্ষা ব্যাপারে সব সময় হুশিয়ার থাকতে হবে এবং পরীক্ষায় পাশ
করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ
সবাইকে পরীক্ষায় পাশ করার তাওফিক দান করুন।
ইসলামী সংগঠনের সবাইকে নিজেদের তাওফিক
অনুসারে আল্লাহর পথে দান করতে হবে। ইহাই
হচ্ছে ইসলামী সংগঠনের আয়ের প্রধান উৎস। এ ব্যাপারে
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “এবং তোমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর তোমাদের মাল ও জান দিয়ে।” (সুরা আল ক্বাফঃ ১১)
“হে মুমিনগণ, তোমরা দান
কর আমি যা তোমাদেরকে দিয়েছি তা থেকে সেদিন আসার পূর্বেই যেদিন বেচাকিনা, কোন বন্ধুত্ব এবং কোন সুপারিশ চলবে না।” (সুরা আল বাকারাঃ ২৫৪)
“যারা স্বচ্ছল অবস্থায় ও অসচ্ছল অবস্থায়
দান করে, যারা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে এবং যারা মানুষকে ক্ষমা
করে।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৪)
তাই ইসলামী সংগঠনে আমাদের সবাইকে যেমনি ভাবে
সময় দিতে হবে, ঠিক সেভাবে মালও দিতে হবে। তাহলেই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মাফ করে দেবেন এবং জান্নাত
দান করবেন।
ইসলামী সংগঠনে আমরা যারা আছি, আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে অনেক কিছুরই প্রয়োজন। আমরা তা পাব কোথায়? এ জন্য সংগঠন বা
কোন ব্যক্তির মুখাপেক্ষী না হয়ে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার মূখাপেক্ষী হতে হবে।
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের মহান বরকতময় আল্লাহ রাত্রে
দুনিয়ার আকাশে আগমন করেন, তিনি ডেকে বলেনঃ কে আছ আমার নিকট দোয়া
করার, আমি তার দোয়া কবুল করবো। কে আছো
আমার কাছে চাওয়ার, আমি তাকে দান করবো। কে আছো আমার নিকট ক্ষমা চাওয়ার, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব”। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি)
তাই আল্লাহ যখন দেয়ার জন্য আমাদেরকে ডাকেন, তখন আমাদের যাবতীয় প্রয়োজন একমাত্র মহান আল্লাহর নিকটই চাইতে হবে।
আর একটি হাদিস ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের পিছনে বসা ছিলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “ওহে বৎস, আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি,
মন দিয়ে শোন আল্লাহকে স্মরণ করো, তিনিও
তোমাকে স্মরণ করবেন।
আল্লাহকে স্মরণ করো, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। কোন কিছু চাইতে হলে তাঁর কাছেই চাও। সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে, আল্লাহর কাছেই সাহায্য
প্রার্থনা করো। জেনে রাখো, সমগ্র জাতি
যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে তোমার কোন কল্যাণ করতে চায়, তবে তারা কিছুই করতে পারবে না। বরং আল্লাহ যা তোমার জন্য নির্ধারিত করে
দিয়েছেন তাই হবে। আর সমগ্র দেশবাসিও যদি ঐক্যবদ্ধভাবে তোমার
কোন অকল্যাণ করতে চায়, তারা কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহ যা তোমার জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন তা-ই হবে।” (মিশকাত)
মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ আমাদেরকে দান করুন। (আমিন)
ইসলামী আন্দোলন না করার পরিণতি
হযরত আবু হুরাইফা ইবনে ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে বাধা দেবে। আর উত্তম কল্যাণকর কাজ করার জন্য উৎসাহ উদ্দিপনা দেবে। তা না হলে আল্লাহতায়ালা যে কোন আযাব দিয়ে তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন অথবা তোমাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশী পাপী ও জালেম লোককে তোমাদের শাসক বানিয়ে দেবেন। এমতাবস্থায় তোমাদের মধ্যে নেককার লোকেরা (এসব থেকে মুক্তি পাবার জন্য) আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তাঁদের দোয়া কবুল করা হবে না। (মুসনাদে আহমদ)
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।