বই নোট - ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক - খুররম জাহ মুরাদ - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

May 05, 2024

বই নোট - ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক - খুররম জাহ মুরাদ


 ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক

লেখকঃ খুররম জাহ মুরাদ

লেখক পরিচিত

F  খুররম জাহ্‌ মুরাদ (জন্ম: ১৯৩২ মৃত্যু: ১৯৯৬) একজন পাকিস্তানী ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক

F  তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান নামক রাজনৈতিক দলের একজন নেতা হিসেবেও সমধিক পরিচিত

F  ইসলামী ছাত্রসংঘের ২য় নাজিম-ই-আলা খুররম জাহ মুরাদ এশিয়ার একজন বিখ্যাত প্রকৌশলী

F  একই সাথে তিনি ছিলেন দা’য়ী, সংগঠক, ছাত্রনেতা, হাদীস বিশারদ, ইসলামিক চিন্তাবিদ এবং সেরা প্রকৌশলী

F  খুররম জাহ মুরাদ পাকিস্তানে তার দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করলেও গোটা এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকায় তিনি দাওয়াতের কাজ ও ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠার কাজ করেছেন

F  একজন শিক্ষক ও দা’য়ি হিসেবে তিনি বহু মানুষে প্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন

F  পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান হিসেবে পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও আফ্রিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনের যুবকদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন

F  ১৯৫১-১৯৫২ সেশনে খুররম জাহ মুরাম ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিম-ই-আ’লার দায়িত্ব পালন করেন

F  ইসলামী ছাত্রসংঘের সংবিধান প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সংবিধানের খসড়া তারই তৈরী করা

F  তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেয়ার পর পূর্ব-পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করেন

F  ১৯৭১ সালে ঢাকা মহানগরীর আমীরের দায়িত্ব পালন করেন

F  তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, UK এর ডিরেক্টর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন

F  তিনি মাওলানা মওদুদী রাহি. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘তরজুমানুল কুরআনের’ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন

F  সর্বশেষ খুররম জাহ মুরাদ পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন

ভূমিকা

ঐতিহাসিকভাবে একথা সত্য যে,

প্রাক ইসলামী যুগে মানুষে মানুষে কোন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিলনা বিভিন্ন গোত্র, দল, খান্দানে বিভক্ত ছিল ছিল পরস্পরের রক্ত পিপাসু ও জানমাল ইজ্জতের দুশমন

এমতবস্থায় শত্রুতা ভুলে সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বের মহান শিক্ষা দিয়েছিল হযরত মুহাম্মদ সা.

যার প্রভাবে সর্বকালের সবচেয়ে বিশৃঙখল জাতি সর্বশ্রেষ্ট জাতিতে রূপাত্তরিত হতে পেরেছিল প্রতিষ্ঠা করতেপেরেছিল একটি আদর্শ রাষ্ট্র, আর তা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের সুস্পষ্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুতরাং বলা যায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এমন একটি ঔষধ তথা পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ অতিব প্রয়োজন

মৌলিক আলোচনাঃ

প্রকৃত পক্ষে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে তিনটিঃ

১. প্রয়োজনীয় গুনাবলী

২. ধ্বংস ও দুর্বলকারী উপাদান এবং তা তেকে বাঁচার উপায়

৩. যে সমস্ত গুনাবলী সম্পর্ককে মজবুত ও উন্নত করে

বইটি ৪টি ভাগে বিভক্ত রয়েছে

১. পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি, তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

২. চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা ও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য

৩. সম্পর্ককে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার উপায়

৪. সম্পর্ককে র্দঢ়তর করার পন্থা

একঃ পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ

১. সম্পর্কের ভিত্তি ও মর্যাদাঃ

(ক) সম্পর্কের প্রকৃতি

(খ) ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সম্পর্ক একটি আদর্শিক সম্পর্ক

(গ) এটা কোন হালকা বা ঠুনকো সম্পর্ক নয় গভীর ও প্রগার ভালবাসা এবং স্থিতিশীলতার সমন্বয়ে রচিত

২. ভ্রাতৃত্ব ঈমানের অপরিহার্য দাবিঃ

(ক) পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গোটা জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত এজন্য ঈমান মুমিনদেরকে সকল মানুষদের সাথে সাধারণ ভাবে এবং পরস্পরের সাথে বিশেষ ভাবে সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দেয়

(খ) আর এ সম্পর্ককে আদল ও ইহসানের উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার দিক নির্দেশনা দেয়

৩. বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লবের জন্য ভ্রাতৃত্ব অপরিহার্যঃ

(ক) ঈমানের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লব সৃষ্টি

(খ) বিপ্লবের জন্য একটি সুদৃঢ়, স্থিতিশীল ও ভ্রাতৃত্বশূলভ সম্পর্ক অপরিহার্য

(গ) এ সম্পর্কের প্রকৃতি হবে সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায়

৪. ভ্রাতৃত্বের দাবি, তার গুরুত্ব ও ফলাফলঃ

(ক) ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, রহমত ও ভালবাসার সম্পর্ক

(খ) ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলের স. বানী-“তোমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতোক্ষণ না পরস্পরকে বালোবাসবে” (মুসলিম-আবু হুরায়রা)

(গ) ভ্রাতৃত্বের ফলাফলঃ ঈমান পূর্ণ হবে, আখেরাতের সফলতা

৫. আখিরাতে ভ্রাতৃত্বের সুফলঃ

(ক) আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা আরশের ছায়াতলে থাকবেন,

(খ) সম্পর্ক স্থাপন কারীদের জন্য নূরের মিম্বর তৈরি হবে

৬. পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্বঃ

(ক) কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য এক ইমানের ভিত্তিতে পারস্পরিক ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন ইসলামী আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

(খ) পারস্পরিক সম্পর্কের বিকৃতি গোটা দ্বীনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়

দুইঃ চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা ও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যঃ

১. কল্যান কামনাঃ

কল্যাণ কামনার প্রকৃত মানদন্ড হচ্ছে যে, মানুষ নিজের জন্য যা পছন্দ করবে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে

২. আত্মত্যাগঃ

একজন মুসলমান তার নিজের উপর অপরকে অগ্রাধিকার দেয় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ নিজের প্রয়োজনকে মুলতবী রেখে অপরের প্রয়োজন মেটাবেন

৩. আদল-সুবিচারঃ

ক) লোকদের অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা ও ভারসাম্য বজায় রাখা

খ) প্রত্যেকের অধিকার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে

৪. ইহ্সান-সদাচরণঃ

ক) ইহসান অর্থ হল সম্পর্কের সৌন্দর্য ও পূর্ণতা দান করা

খ) সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদল যদি অপ্রীতি ও তিক্ততা থেকে রক্ষা করে তবে ইহসান তাতে মাধুর্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করে

৫. রহমতঃ

ক) রহমতের এ গুণই ব্যক্তিকে জনপ্রিয় করে তোলে এবং সাধারণ লোকদেরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে

খ) রাসুল সা. এর বাণীঃ “যারা রহম করে, রহমান তাদেও প্রতি রহম করেন তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করো, যেন আসমানবাসী তোমাদের প্রতি রহম করেন

৬. মার্জনাঃ

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ পরস্পর একে অন্যের দোষত্রুটি মার্জনা করবে কারণ যারা দুনিয়ার জীবনে ক্ষমা করে দেবেন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন

৭. নির্ভরতাঃ

মুমিনগণ একে অন্যের উপর যেন নির্ভর করতে পারে অর্থাৎ তার সমস্ত গোপন বিষয়াদির ব্যাপারেও পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে প্রকাশ করতে পারে অন্যের কাছে আর এটাই হল ভ্রাতৃত্বের দাবি

৮. মূল্যোপলব্ধিঃ

মানুষ তার এ সম্পর্কের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে এতটুকু অবহিত হবে, যাতে করে এর সঠিক মূল্যটা সে উপলব্ধি করতে পারে

তিনঃ সম্পর্ককে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার উপায়ঃ

১. অধিকারে হস্তক্ষেপঃ

একজন মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে তার ভাইয়ের অধিকারের মধ্যে কোন একটি অধিকারও হরণ করার অপরাধে যাতে সে অপরাধী না হয় তার প্রতি দৃষ্টি রাখা

রাসুল সা. বলেনঃযে ব্যক্তি কসম খেয়ে কোন মুসলমানের হক নষ্ট করেছে, আল্লাহ নিঃসন্দেহে তার প্রতি জাহান্নামকে অনিবার্য এবং জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন

২. দেহ ও প্রাণের নিরাপত্তাঃ

কোন মুসলিম ভাইয়ের দেহ প্রাণের নিরাপত্তার জন্য একজন অন্যের জন্য সর্বদা প্রস্তত থাকবে

রাসুল সা. বলেনঃমুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর তার সঙ্গে লড়াই করা হচ্ছে কুফরী” (বুখারী, মুসলিম)

৩. কটুভাষা ও গালাগালঃ

কোন ভাইকে সাক্ষাতে গালাগাল করা তার সঙ্গে কটু ভাষায় কথা বলা এবং ঠাট্টা বিদ্রুপ করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ রাসুল সা. বলেনঃকোন কটুভাষী ও বদ স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেনা

৪. গীবতঃ

গীবত হচ্ছে মানুষ তার ভইয়ের সাননে নয় বরং তার পেছনে বসে নিন্দা করা

৫. চোগলখোরীঃ

গীবতের একটি বিশেষ রূপ হল চোগলখোরী

রাসুল সা. বলেনঃচোগলখোর জান্নাতে যাবেনা

৬. শরমিন্দা করাঃ

আপন ভাইকে তারা সাক্ষাতে বা অন্য লোকের সামনে তার দোষত্রুটির জন্য লজ্জা দেওয়া এবং এভাবে অপমান করা শরমিন্দার অন্তর্ভুক্ত

রাসুল সা. বলেনঃযে ব্যক্তি তার ভাইকে তার গুনাহের জন্য লজ্জা দিল তার দ্বারা সেই গুনাহ কাজ না হওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবেনা

৭. ছিদ্রান্বেষণঃ

কোন ভাইয়ের দোষত্রুটি খুজে বেড়ানোই ছিদ্রান্বেষণ করা

আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল স. অপরের দোষ খুজতে নিষেধ করেছেন

৮. উপহাস করাঃ

ঠাট্টা বিদ্রুপের মাধ্যমে একে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেনঃহে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় অপর কোনো সম্প্রদায়কে ঠাট্টা করোনা, সম্ভবতঃ সে তার চাইতে শ্রেষ্ঠ হবে আর কোন নারী অপর কোন নারীকে ঠাট্রা করো না, সম্ভবত সে শ্রেষ্ঠ হবে তার চাইতে -সূরা হুজরাতঃ ১১

৯. তুচ্ছ জ্ঞান করাঃ

অপর ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করা মারাত্মক গুনাহের কাজ

রাসুল সা. বলেনঃকোন মুসলমান অপর মুসলমানকে না অপমান করবে আর না তুচ্ছ জ্ঞান করবে

১০. নিকৃষ্ট অনুমানঃ

প্রত্যক্ষ জ্ঞান ছাড়া কোন মুসলমান যদি তার ভাই সম্পর্কে অহেতুক সন্দেহ করে তবে তাহাই নিকৃষ্ট অনুমান অনুমান করে কথা বলা গুনাহের কাজ এ সম্পর্কে আল্লাহ প্রবিত্র কুরআনে বলেনঃহে ঈমানদারগণ, অনুমান থেকে তোমরা বেঁচে থাকো, নিঃসন্দেহে কোন-কোন অনুমান হচ্ছে গুনাহ” -সূরা হুজরাতঃ ১২

১১. অপবাদঃ

গীবতের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ হল অপরের কাছে এক ভাই সম্পর্কে মিথ্যা বলা যে দোষ এর মধ্যে সে নেই

এ সম্পর্কে আল্লাহ প্রবিত্র কুরআনে বলেনঃযারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে -সূরা আহযাবঃ ৫৮

১২. ক্ষতিসাধনঃ

মুমিনদের লক্ষ্য রাখা অতিব প্রয়োজন যে, তার দ্বারা যেন অন্যের ক্ষতি সাধন না হয় হাদিসে ক্ষতি সাধন কারীকে অভিশপ্ত বলা হয়েছে

১৩. মনোকষ্টঃ

মুসলমানদের অবশ্যই চলা-ফেরা, কথা-বার্তায় সতর্ক থাকতে হবে যে, তার দ্বারা যেন কেউ মনোকষ্ট না পায় কারণ এর দ্বারা সম্পর্ক নষ্ট হয়

১৪. ধোঁকা দেওয়াঃ

কথা বার্তা বা লেনদেনে আপন ভাইকে ধোঁকা দেয়া বা মিথ্যা কথা বলা সম্পর্কে মুসলমানদেরকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে

রাসুল সা. বলেছেনঃসবচাইতে বড় খিয়ানত হচ্ছে এই যে, তুমি তোমার ভাইকে কোনো কথা বললে সে তোমাকে সত্যবাদী মনে করলো; অথচ তুমি তাকে মিথ্যা কথা বললে” (তিরমিযী; সুফিয়ান বিন আসাদ)

১৫. হিংসাঃ

হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা এক ঘৃণ্য ব্যাধি এই মারাত্মক ব্যাধির প্রভাবে লোকদের ঈমান বিপন্ন হয়ে পড়ে হিংসার মূলে কতগুলো জিনিস থাকে যেমন বিদ্বেষ, শত্রুতা, ব্যক্তিগত অহমিকা, অপরের সর্ম্পকে হীনমন্যতা, অপরকে অনুগত করার প্রেরনা ইত্যাদি

রাসুল সা. বলেছেনঃতোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক কারন আগুন যেমন লাকড়িকে খেয়ে ফেলে , হিংসা ঠিক তেমনি নেকী ও পুণ্যকে খেয়ে ফেলে

চারঃ সর্ম্পকে দৃঢ়তর করার পন্থা

১. মান ইজ্জতের নিরাপত্তাঃ

এক মুসলমানের জন্য আরেক মুসলমানের মান ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এটা সম্ভব হলে আন্তরিকতা গড়ে উঠে

২. দুঃখ কষ্টে অংশগ্রহণঃ

মুমিনগন হচ্ছে একটি দেহ দেহের এক অংশে যদি আঘাত প্রাপ্ত হয় তবে অন্য অংশ ও তেমন কষ্ট অনুভব করে ঠিক তেমনি এক মুসলমান অপর মুসলমানের দুঃখ কষ্টে শরীক থাকবে

৩. সমালোচনা ও নসীহতঃ

নিজের দোষ ত্রুটি নিজের চোখে ধরা পড়েনা তাই মুমিনগণ একে অপরকে গঠণমূলক সমালোচনা ও

নছিহতের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে

কারণ, হাদীসে বলা হয়েছেঃ এক মুসলমান অপর মুসলমানের আয়না স্বরূপ

৪. মোলাকাতঃ

একতা সত্য যে, পরস্পর অধিক সাক্ষাতের ফলেই এক জন মানুষের সাথে আরেক জন মানুষের বন্ধন টিকে থাকে

সুতারাং মোলাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম

৫. রুগ্ন ভাইয়ের পরিচর্যাঃ

কোন ব্যক্তি যদি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে তবে তার সেবা শুশ্রুষা করা এর ফলে বন্ধুত্বের বন্ধন আরো দৃঢ হয়

রাসুল সা.বলেনঃ “যখন সে রোগাক্রান্ত হয় তাকে সেবা কর ”

৬. আবেগের বহি:প্রকাশঃ

কোন মানুষের মধ্যে কারো প্রতি প্রেম ভালবাসা থাকলে তা আবেগের মাধ্যমে বহি:প্রকাশ পাবে এভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে

৭. প্রীতি ও খোশ-মেজাজের সাথে মুলাকাতঃ

পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে সাক্ষাৎ, কথা বলার সময় মিষ্টি কথা বলা এবং ঠাট্টা বিদ্রুপ ও উপহাস থেকে দূরে থাকা

রাসুল সা. বলেছেনঃনেক কাজের ভেতর কোনোটাকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না, যদিও তা আপন ভাইয়ের সাথে তোমার হাস্যোজ্জ্বল সাক্ষাৎ করার তূল্যও হয়” (মুসলিম; আবু যর রা.)

৮. সালামঃ

পারস্পরিক সর্ম্পক বৃদ্ধিতে সালামের বিকল্প নেই সালামের মাধ্যমে অন্ধকার দূরীভূত হয় এজন্য রাসুল সা. বলেনঃপারস্পর সালাম বিনিময় কর

৯. মুছাফাহঃ

মুছাফাহর মাধ্যমে পারস্পরিক ভালোবাসা ও হৃদয়াবেগ প্রকাশের দ্বিতীয় মাধ্যম

রাসুল সা. বলেছেনঃমুছাফাহার দ্বারা তোমাদের পারস্পরিক সালামের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে” (তিরমিযী; আবু উমালাহু রা.)

১০. উৎকৃষ্ট নামে ডাকাঃ

কাউকে তার পছন্দনীয় ভাষায় সম্মধোন করলে সে খুশী হয় আন্তরিকতা চলে আসে পক্ষান্ততে উপনামে বা বিকৃত নামে ডাকলে মন খারাপ করে, সম্পর্ক নষ্ট হয়

১১. ব্যক্তিগত ব্যাপারে ঔৎসুক্যঃ

আন্তরিক ভালোবাসার একটি অন্যতম তাকিদ হচ্ছে, নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারের ন্যায় আপন ভাইয়ের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও ঔৎসুক্য পোষণ করা

রাসুল সা. বলেছেনঃএক ব্যক্তি যখন অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তখন তার কাছে থেকে তার নাম, তার পিতার নাম এবং তার গোত্র-পরিচয় জিজ্ঞেস করে নিবে কারণ এরদ্বারা পারস্পরিক ভালোবাসার শিকড় অধিকতর মজবুত হয়” (তিরমিযী, ইয়াজিদ বিন নাআমাহ রা.)

১২. হাদীয়াঃ

সম্পর্ক বৃদ্ধির অতি উত্তম পন্থা হল মাসে মাসে উপহার দেওয়া

রাসুল সা. বলেছেনঃএকে অপরকে হাদিয়া পাঠাও, এরদ্বারা পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে এবং হৃদয়ের দূরত্ব ও শত্রুতা বিলীন হয়ে যাবে” (মুয়াত্তা মালিক)

১৩. শোকর-গোজারীঃ

অপরের ভালোবাসা উপলব্ধিকে প্রকাশ করার জন্যে শোকর-গোজারী হচ্ছে একটি উত্তম পন্থা

১৪. একত্রে বসে আহারঃ

আন্তরিকতা, ভালবাসা প্রকাশের একটি চমৎকার পন্থা হল একত্রে বসে আহার করা

নবী কারীম সা.-এর কাছে কোন খাবার জিনিস থাকলে অথবা কোথাও থেকে কিছু আসলে তিনি গোটা মজলিসকে তাতে শরীক করতেন

১৫. দোয়াঃ

একজন আরেকজনের জন্য দোয়া করলে যদি সে ব্যক্তি তা দেখতে পায় তবে সে মুগ্ধ হয়এভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে পস্পর্ক বৃদ্ধি পায়

১৬. সুন্দরভাবে জবাব দেয়াঃ

পারস্পরিক কথা বার্তায় কোন প্রশ্নের জবাব সুন্দর ভাবে দেয়া

রাসুল সা. বলেছেনঃদুইজন প্রেমিকের মধ্যে সেই হচ্চে শ্রেষ্ঠ, যে তার ভাইয়ের প্রতি অধিক ভালোবাসা পোষণ করে

১৭. আপোষ রফা এবং অভিযোগ খণ্ডনঃ

কোন ব্যাপারে মনোমালিন্য হলে আপোষে করে নেয়া এবং অভিযোগ খণ্ডন করা

অভিযোগ থেকে বাচতে হলে করণীয়ঃ

প্রথমতঃ অভিযোগের সুযোগ না দেওয়া

দ্বিতীয়তঃ দরাজদিল হওয়া উচিত

তৃতীয়তঃ অভিযোগ লালন না করে তার ভাইয়ের নিকট প্রকাশ করা উচিত

চতুর্থতঃ অভিযোগে অসন্তুষ্ট না হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত

পঞ্চমতঃ অভিযোগ জানবার সঙ্গে সঙ্গেই আত্মসংশোধনের চেষ্টা করা

ষষ্ঠতঃ অভিযোগ স্বীকার করলে তাকে ক্ষমা করে দিতে কোনরূপ কার্পন্য না করা

১৮. প্রভুর কাছে তাওফিক কামনাঃ

বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক হচ্ছে ঈমানের একটি বুনিয়াদী শর্ত একজর ভাই আরেকজন ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট বিনীতভাবে মুনাজাত করা উচিত

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেনঃআর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়" -সূরা হাশরঃ ১০

 

অনলাইনে আরেকটি নোট পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

অন্যান্য বইয়ের নোট পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘

আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুনটেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন




No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।