দারসুল কুরআন – সূরা আল বাকারাহ – আয়াত ২৬১-২৬২ – ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ - আবু জারীর - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

August 16, 2023

দারসুল কুরআন – সূরা আল বাকারাহ – আয়াত ২৬১-২৬২ – ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ - আবু জারীর

দারসুল কুরআনঃ ইনফাক্ব ফী সাবিলিল্লাহ

সূরা আল বাকারাহ-আয়াত ২৬১-২৬২

লিখেছেনঃ আবু জারীর

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

তেলাওয়াতঃ

﴿مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾﴿الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾

অনুবাদঃ

২৬১. যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হয় এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, যার প্রত্যেকটি শীষে থাকে একশতটি করে শস্যকণা এভাবে আল্লাহ যাকে চান, তার কাজে প্রাচুর্য দান করেন তিনি মুক্তহস্ত ও সর্বজ্ঞ

২৬২. যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর নিজেদের অনুগ্রহের কথা বলে বেড়ায় না আর কাউকে কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন দুঃখ মর্মবেদনা ও ভয় নেই

নামকরণঃ

➧ সূরা আল বাকারা-سورة البقرة -বাকারাহ মানে গাভী

➧ এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হযরত মুসা (আঃ) এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী জবেহের ঘটনায় গাভীর নাম উল্লেখ থাকায় পরিচিতি হিসেবে এই নামকরণ করা হয়েছে 

সূরার ফযিলাতঃ          

  1. রাসূল সা. বলেন, নিশ্চয় শয়তান ওই ঘর থেকে পলায়ন করে যে ঘরে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয় (মুসলিমঃ ৭৮০)
  2. রাসূল সা. আগে কাউকে দেয়া হয়নি এমন দু’টি নূর হলোঃ ফাতেহাতুল কিতাব আর অন্যটি সুরা বাকারার শেষ আয়াত (মুসলিমঃ ৮০৬)
  3. সুরা বাকারা ও আলে ইমরান পাঠাকারীদের কেয়ামতের মাঠে  দু’টি মেঘ খণ্ড অথবা শামিয়ানা বা পাখির ঝাঁক এর মত ছায়া দিবে (মুসলিমঃ ৮০৪)
  4. কুরআনের শীর্ষচূড়া হলো সুরা বাকারা এতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কুরআনের সব আয়াতের সরদার তা হলো আয়াতুল কুরসি (জামে তিরমিযীঃ ২৮৮১)
  5. রাসূল সা. বলেন, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আল্লাহ আমাকে তাঁর আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে দান করা হয়েছে সুতরাং নিজেরা তা শিখো এবং তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও, কেননা এই আয়াতগুলো হলো দোয়া-দুরুদ  (মুসতাদরাকে হাকেমঃ ২/৩১৫)
  6. রাসূলুল্লাহ সা. বলেনঃ  আল্লাহ তায়ালা জমিন ও আসমান সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন তার থেকে দুটি আয়াত সুরা বাকারার মাধ্যমে শেষ করেছেন যে ঘরে তিন দিন এটা পড়া হবে না, শয়তান সেই ঘরের নিকটবর্তী হয়ে যাবে (জামে তিরমিজিঃ ২৮৮৫) 

নাযিলের সময়-কালঃ

➧ এ সূরার বেশীর ভাগ মদীনায় হিজরাতের পর মাদানী জীবনের একেবারে প্রথম যুগে নাযিল হয়

➧ আর এর কম অংশ পরে নাযিল হয়

➧ বিষয়স্তুর সাথে সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্যের সম্পর্কিত যে আয়াতগুলো নবী করীম সা. এর জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে নাযিল হয় সেগুলোও এখানে সংযোজিত করা হয়েছে

➧ যে আয়াতগুলো দিয়ে সূরাটি শেষ করা হয়েছে সেগুলো হিজরাতের আগে মক্কায় নাযিল হয় কিন্তু বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যের কারণে সেগুলোকেও এ সূরার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে

নাযিলের উপলক্ষঃ

➧ হিজরাতের আগে ইসলামের দাওয়াতের কাজ চলছিল কেবল মক্কায় এ সময় পর্যন্ত সম্বোধন করা হচ্ছিল কেবলমাত্র আরবের মুশরিকদেরকে তাদের কাছে ইসলামের বাণী ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও অপরিচিত

➧ হিজরাতের পরে ইহুদিরা সামনে এসে গেল তাদের জনবসতিগুলো ছিল মদীনার সাথে একেবারে লাগানো তারা তাওহীদ, রিসালাত, অহী, আখেরাত ও ফেরেশতার স্বীকৃতি দিত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের নবী মূসা আ. এর ওপর যে শরিয়াতী বিধান নাযিল হয়েছিল তারও স্বীকৃতি দিত নীতিগতভাবে তারাও সেই দীন ইসলামের অনুসারী ছিল যার শিক্ষা হযরত মুহাম্মাদ সা. দিয়ে চলছিলেন কিন্তু বহু শতাব্দী কালের ক্রমাগত পতন ও অবনতির ফলে তারা আসল দীন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল তাদের আকীদা-বিশ্বাসের মধ্যে বহু অনৈসলামিক বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল তাওরাতে যার কোন ভিত্তি ছিল না

ব্যাখ্যাঃ

ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?

➧ ইনফাক শব্দটির মূল ধাতু নাফাক  ( نفق ) যার অর্থ সুড়ংগ

➧ সাধারণত সুড়ংগের এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে আরেক দিক দিয়ে বের হওয়া যায়

➧ আর এই নাফাক শব্দটির সাথে সম্পদ শব্দটি যোগ হলে এর অর্থ হয় সম্পদ খরচ করা, শেষ করা

➧ এর মানে হচ্ছে সম্পদ কারো হাতে কুক্ষিগত থাকার বস্তু নয় সম্পদ এক দিক দিয়ে আসবে আবার আরেক দিক দিয়ে খরচ হবে

➧ তবে কুরআনে যে ইনফাক এর কথা বলা হয়েছে এই ইনফাক এর সাথে আয় ও ব্যয়ে বৈধতার প্রশ্ন রয়েছে অবৈধ উপায়ে আয় করে অবৈধ খাতে খরচ করলে কুরআনে বর্ণিত ইনফাক হবেনা

➧ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে অর্থদান বুঝানোর জন্য কয়েকটি শব্দ প্রয়োগ হতে দেখা যায় যেমনঃ যাকাত, সদকা, কাফফারা, ফিতরা, ইতয়াম ও ইনফাক

➧ ইনফাক এর নির্দিষ্ট কোন খাত নেই; বৈধ সব খাতে খরচ করার নামই  হচ্ছে ইনফাক

➧ ব্যক্তি নিজের জন্য খরচ করুক, বা পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, মুসলমান কিংবা যেকোন মানুষের কল্যাণে ব্যয় করুক না কেন এমনকি প্রাণী ও সৃষ্টি জগতের জন্য কল্যাণকর যে কোন কিছুর জন্য ব্যয় করলেও ইনফাক এর অন্তর্ভুক্ত হবে

আল্লাহর কাছে ইনফাক ফীসাবিলিল্লাহের গুরুত্ব ও ফজিলতঃ

আল্লাহর কাছে ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহের গুরুত্ব অপরিসীম যে কারণে কুরআনে কারীমে অসংখ্যবার আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহের তাগিদ এবং উৎসাহ দিতে গিয়ে তিনি বলেছেনঃ

§  সূরা আল বাকারাহঃ ২৬১ ও ২৬২

﴿مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾﴿الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾

যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হয় এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, যার প্রত্যেকটি শীষে থাকে একশতটি করে শস্যকণা এভাবে আল্লাহ যাকে চান, তার কাজে প্রাচুর্য দান করেন তিনি মুক্তহস্ত ও সর্বজ্ঞ

যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর নিজেদের অনুগ্রহের কথা বলে বেড়ায় না আর কাউকে কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন দুঃখ মর্মবেদনা ও ভয় নেই

§  সূরা আল আনফালঃ ৩

﴿الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ﴾

তারা নামায কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে (আমার পথে) খরচ করে 

§  সূরা আল বাকারাহঃ ২৭৪

﴿الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾

যারা নিজেদের ধন-সম্পদ দিনরাত গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান রয়েছে

§  সূরা আল আহযাবঃ ৩৫

﴿إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾

নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সতূবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাংগ হেফাযতকারী পুরুষ যৌনাংগ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকির কারী পুরুষ ও যিকিীরকারী নারী- তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরুষ্কার

§  সূরা আর রাদঃ ২২

﴿وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ﴾

এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তষ্টির জন্য সবর করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে তাদের জন্য রয়েছে পরকালের গৃহ

§  সূরা আল বাকারাহঃ ২৭১

﴿إِن تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ ۖ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّئَاتِكُمْ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ﴾

যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর তবে তা কতই না উত্তম আর যদি খয়রাত গোপন কর এবং অভাবগ্রস্তদেরকে দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম আল্লাহ তাআলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন

§  সূরা আস সাফঃ ১০-১২

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ﴾﴿تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾﴿يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾

হে ঈমান আনয়নকারীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দেবে?

তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান

আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমনসব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচে দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন এটাই বড় সফলতা

ইনফাকের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. যা বলেন, তা হলঃ 

عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) قَالَ اللهُ تَعَالَى اَنْفِقُ يَا اِبْن اَدَمَ اُنْفِقُ عَلَيْكَ

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ বলেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাদের দান করব (বুখারী-মুসলিম)

وَعَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ (صـ) اَلسَّخِىُّ قَرِيْبٌ مِّنَاااللهِ وقَرِيْبٌ مِّنَ الْجَنَّةِ قَرِيْبٌ مِّنِ النَّاسِ بَعِيْدٌ مِّنَ النَّار وَالْبَخِيْلُ بَعِيْدٌ مِّنَ الْجَّنَّةِ بَعِيْدٌ مِّنَ النَّسِ قَرِيْبٌ مِّنَ النَّار وَلَجَاهِلٌ سَخِىٌّ اَحَبٌّ اِلَى اللهِ مِنْ عَابِدٍ بَخِيْلٍ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের  নিকটতম এবং মানুষেরও নিকটতম হয়ে থাকে আর দূরে থাকে দোযখ থেকে পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি অবস্থান করে আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশত থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, দোযখের নিকটে অবশ্য অবশ্যই একজন জাহেল দাতা একজন বখিল আবেদের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রিয় (তিরমিযি) 

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم دينار انفقته في سبيل الله و دينارانفقته في رقبة و دينارتصدقت به علي مسكين و دينار انفقته علي اهلك اعظمها اجرا الذي انفقته علي اهلك

হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, যে দীনার আল্লাহর পথে খরচ হয়; আর যে দীনার কারো মুক্তির জন্য ব্যয় হয়; আর যে দীনার মিসকীনের প্রতি খরচ করা হয়; আর যে দীনার পরিবার পরিজনের পিছনে ব্যয় হয়, আল্লাহ এর বিনিময় দান করেন আর যে অর্থ পরিবারের জন্য ব্যয় হয় আল্লাহ এর বড় প্রতিদান দেন(মুসলিম)

আরো বিভিন্ন হাদীস থেকে যা জানা যায়ঃ

  1. উদ্ধৃত্ত্ব সম্পদ খরচ করা তাহলে তা কল্যাণকর হবে, আর যদি তা সঞ্চয় করে রাখা হয়, তা হবে অকল্যাণকর তবে জীবন ধারণের ন্যুনতম সম্পদের জন্য পাকড়াও করা হবেনা খরচের সুচনা করতে হবে পরিবার থেকেই(মুসলিম)
  2. তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু নিজেরঃ (১) যা খেয়ে শেষ করেছে, (২) যা পরিধান করে নষ্ট করেছে, এবং (৩) যা দান করে জমা করেছে(মুসলিম)
  3. রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমার নিকট যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণও স্বর্ণ থাকে, তাহলে তিন রাত অতিবাহিত হওয়ার পরও তার সামান্য কিছু আমার কাছে বিশিষ্ট থাকুক, তা আমি পছন্দ করি না (বুখারী)
  4. সুস্থ ও উপার্জনক্ষম অবস্থার দান উত্তম, যখন দারিদ্র হওয়ারও ভয় থাকে এবং ধনী হওয়ারও আশা থাকে (বুখারী-মুসলিম)    
  5. মহান আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করলে সাত শত গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে (মুসনাদে আহমাদ)
  6. হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর সাদাক্বাহ করা হলে, আল্লাহ তায়ালা সেটা প্রতিপালন করতে থাকেন, যেমন ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করা হয়ে থাকে, এমন কি সেটা একটি পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায় (বুখারী-মুসলিম)
  7. প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেস্তা অবতরণ করেন একজন আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলতে থাকেন-হে আল্লাহ! দানকারীর মালে বিনিময় দান করো আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দুয়া করে বলেন, হে আল্লাহ কৃপণের মালে ধ্বংস দাও (বুখারী-মুসলিম)
  8. যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্থের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় সহজ করে দিবেন (মুসলিম)
  9. কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে তন্মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে-ঐ ব্যক্তি যে এতো গোপণে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে বাম হাত তা জানতেই পারে না (বুখারী-মুসলিম)
  10.  সালাত (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, সিয়াম ঢাল স্বরূপ এবং দান সাদক্বাহ গুনাহ মিটিয়ে ফেলে, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে (আবু ইয়ালা)
  11.  রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে (বুখারী-মুসলিম)
  12.  নিশ্চয় দান সাদাক্বাহ, দানকারী থেকে কবরের উত্তাপ নিভিয়ে দিবে আর মুমিন কিয়ামত দিবসে নিজের সাদাকার ছায়াতলে অবস্থান করবে(বায়হাকী, তাবারানী সহীহ)
  13.  মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবেই গন্য হবে কিন্তু গরীব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ সওয়াব হয় একটি সাদাক্বার; অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার (নাসায়ী ও তিরমিযী)
  14.  নবী সা. বলেন, তোমরা কৃপণতা ও লোভ থেকে সাবধান কেননা পূর্বযুগে এই কারণে মানুষ রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, মানুষকে খুন করেছে এবং নানা প্রকার পাপাচার ও হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে (সুনানে আবু দাউদ, হাকিম)   
  15.  নবী সা. কৃপণতা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন তিনি দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! তোমার কাছে কৃপণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ (মুসলিম)
  16.  রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমি আর এতীমের লালন পালনকারী জান্নাতে এ রকম এক সাথে থাকবো, রাসূলুল্লাহ সা. নিজের শাহাদাত আঙ্গুল ও মধ্যমা এক সাথে মিলিয়ে বললেন 

পূর্ববর্তী উম্মতদের সাদাকাঃ

আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেনঃ (পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যে) এক ব্যক্তি বলল, আমি কিছু সদকা করব সদকা নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিলো সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, চোরকে সদকা দেয়া হয়েছে এতে সে বললো, হে আল্লাহ! প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সদকা করবো সদকা নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিণীর হাতে দিল সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, রাতে এক ব্যভিচারিণীকে সদকা দেয়া হয়েছে লোকটি বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সদকা) ব্যভিচারিণীর হাতে পৌছল আমি অবশ্যই সদকা করব এরপর সে সদকা নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল সকালে লোকেরা বলতে লাগল, ধনী ব্যক্তিকে সদকা দেয়া হয়েছে লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সদকা) চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়লো পরে স্বপ্নযোগে তাকে বলা হলো, তোমার সদকা চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা হতে বিরত থাকবে, তোমার সদকা ব্যভিচারিণী পেয়েছে, সম্ভবত সে তার ব্যভিচার হতে পবিত্র থাকবে, আর ধনী ব্যক্তি তোমার সদকা পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদ হতে সদকা করবে (বুখারীঃ ১৪২১)

সাহাবায়ের কেরাম রা. এর দানের দৃষ্টান্তঃ

§  সূরা আলে ইমরানঃ ৯২

﴿لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ﴾

তোমরা নকী অর্জন করতে পারো না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা থেকে বেখবর থাকবেন না

এই আয়াতটি নাযিল হবার পর সাহাবায়ে কেরাম প্রত্যেকে নিজ নিজ সহায় সম্পত্তির প্রতি লক্ষ্য করলেন যে কোনটি তাঁদের নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় এরপর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করার জন্য তাঁরা রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে আবেদন করতে লাগলেন

  1. মদীনায় আনসারগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ধনী ছিলেন হযরত আবু তালহা রা. মসজিদে নববী সংলগ্ন বিপরীত দিকে তাঁর একটি বাগানে বীরহা নামে একটি কূপ ছিল রাসূলুল্লাহ সা. মাঝে মধ্যে এ বাগানে প্রবেশ করতেন এবং বীরহা কূপ থেকে পানি পান করতেন একূপের পানি তিনি পছন্দ করতেন আবু তালহার এ বাগান অত্যন্ত মূল্যবান, উর্বর ও তাঁর বিষয় সম্পত্তির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হবার পর তিনি রাসূলুল্লাহ সা. এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার সব বিষয় সম্পদের মধ্যে বীরহা আমার কাছে সব চেয়ে প্রিয়আমি এটি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে চাই আপনি যে কাজে পছন্দ করেন এটি তাতেই খরচ করেন রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ বিরাট মুনাফার এ বাগানটি আমার মতে আপনি আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বন্টন করে দিন হযরত আবু তালহা এ পরামর্শ শিরোধার্য করে বাগানটি আত্মীয় স্বজন ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন(বুখারী-মুসলিম)
  2. হযরত যায়েদ ইবন হারিসা রা. তাঁর আরোহনের প্রিয় ঘোড়াটি নিয়ে উপস্থিত হন এবং আল্লাহর রাসূলের কাছে আরয করেন, আমার সম্পদের মধ্যে এটি আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় একে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করতে চাই রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর ঘোড়াটি গ্রহণ করে তাঁরই পুত্র ওসমানকে দান করলেন দান করা বস্তু স্বগৃহে ফেরত যেতে দেখে যায়েদ ইবন হারেসা কিছুটা মনক্ষুন্ন হলেন কিন্তু মহানবী সা. তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেনতোমার দান গৃহীত হয়েছে- (তাফসীরে মাযহারী ও ইবন জারীর তাবারী)  

§  সূরা আত তাওবাহঃ ১৯-২২

﴿أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ لَا يَسْتَوُونَ عِندَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ﴾﴿يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيمٌ﴾﴿خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ﴾

তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে এমন ব্যক্তিদের কাজের সমান মনে করে নিয়েছ যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি এবং সংগ্রাম -সাধনা করেছে আল্লাহর পথে?  

এ উভয় দল আল্লাহর কাছে সমান নয় আল্লাহ জালেমদের পথ দেখান না আল্লাহর কাছে তো তারাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, যারা ঈমান এনেছে এবং তার পথে ঘর-বাড়ি ছেড়েছে ও ধন-প্রাণ সমর্পন করে জিহাদ করেছে তারাই সফলকাম

তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত, সন্তোষ ও এমন জান্নাতের সুখবর দেন, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী

সেখানে তারা চিরকাল থাকবে অবশ্যি আল্লাহর কাছে কাজের প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই রয়েছে

হাদীসের ভাষায় আল্লাহর পথে ব্যয়ের সুফলঃ

আল্লাহর পথে খরচে সাবধানতাঃ

➧ সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে দিয়ে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জলিত করা হবে তন্মধ্যে (সর্বপ্রথম বিচার করা হবে) সেই ব্যক্তির, আল্লাহতায়ালা যাকে প্রশস্ততা দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের অর্থ সম্পদ তাকে সম্মুখে নিয়ে আসা হবে অতঃপর (আল্লাহ তায়ালা) তাকে নিয়ামতরাজীর পরিচয় করাবেন সে তা চিনতে পারবে তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কি কাজ করেছ এই নিয়ামতসমূহ দ্বারা ? সে জবাব দিবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশী হবেন এধরনের সকল পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ সম্পদ ব্যয় করেছি তিনি বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো বরং তুমি এরূপ করেছো এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে, সে দানবীর আর তা তো বলাই হয়েছে অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে তখন তাকে মুখের উপর উপুর করে টেনে হিচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (মুসলিম)

➧ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি যারা টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে যে কাপড় পরিধান করে, দান করে যে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে যে ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রয় করে (মুসলিম)

দান কবুল হওয়ার জন্য দুআ করতে হবেঃ

➧ আল্লাহর পথে দান করার পর আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর কাছে দুআ করা আল্লাহ যেন আমাদের দান-খয়রাত কবুল করেন আর দান করে গর্ববোধ করা বা দানের প্রকাশ করা ঠিক নয় কেননা দান করতে পারাটা আল্লাহর অনুগ্রহ বৈ কিছু নয়আল্লাহর দেয়া সম্পদ আল্লাহর পথে দান করাতে কোন কৃতিত্ব নেই

➧ ধন-সম্পদ যদি নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ব্যয় করা হয় অথবা পরিবার-পরিজন ও সন্তান সন্তিতার ভরণ-পোষনের বা আত্মীয়-স্বজনের দেখাশুনা করার জন্য অথবা অভাবীদের সাহায্যার্থে বা জনকল্যাণমূলক কাজে এবং জিহাদের উদ্দেশ্যে, যে কোনভাবেই ব্যয় করা হোক না কেন, তা যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যয় করা হয় তাহলে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করার মধ্যে গণ্য হবে

উপসংহারঃ

§ সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৪

﴿الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ﴾

যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ক্রটি মাফ করে দেয় এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন

যে পরিমাণ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও গভীর আবেগ-উদ্দীপনা সহকারে মানুষ আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিদানও তত বেশী ধার্য হবে যে আল্লাহ একটি শস্যকণায় এত বিপুল পরিমাণ বরকত দান করেন যে, তা থেকে সাতশোটি শস্যকণা উৎপন্ন হতে পারে, তাঁর পক্ষে মানুষের দান-খয়রাতের মধ্যে এমনভাবে বৃদ্ধি ও ক্রমবৃদ্ধি দান করার যার ফলে এক টাকা ব্যয় করলে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়

এই বাস্তব সত্যটি বর্ণনা করার পর আল্লাহর দু'টি গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছেঃ

  1. একটি গুণ হচ্ছে, তিনি মুক্ত হস্ত-তাঁর হাত সংকীর্ণ নয় মানুষের কাজ প্রকৃতপক্ষে যতটুকু উন্নতি, বৃদ্ধি ও প্রতিদান লাভের যোগ্য, তা তিনি দিতে অক্ষম, এমনটি হতে পারে না
  2. দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তিনি সর্বজ্ঞ অর্থাৎ তিনি কোন বিষয়ে বেখবর নন যা কিছু মানুষ ব্যয় করে এবং যে মনোভাব, আবেগ ও প্রেরণা সহকারে ব্যয় করে, সে সম্পর্কে তিনি অনবহিত থাকবেন, ফলে মানুষ যথার্থ প্রতিদান লাভে বঞ্চিত হবে, এমনটিও হতে পারে না

শিক্ষাঃ

  1. স্বচ্ছল বা অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় সাধ্যমত দান করতে হবে
  2. দান করে খোটা দেয়া যাবেনা।
  3. লোক দেখানোর জন্য দান করা যাবেনা
  4. এমন ভাবে দান করতে হবে যে ডান হাত কি দান করল তা বাম হাত টের না পায়
  5. দান শুরু করতে হবে পরিবার থেকে
  6. আত্মীয়দের মধ্যে দান করালে দ্বিগুণ সওয়াব
  7. জেহাদ ফী সাবিলিল্লাহ তথা ইকামাতে দ্বীনের কাজের জন্য দান করতে হবে
  8. দানকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন, মানুষে ভালোবাসে এবং ফেরেশতারা দোয়া করে
  9. কৃপন আবেদের চেয়ে জাহেল দানকারী আল্লারহ নিকট অধিক প্রিয় 
  10. দানকারীদের রিজিক ৭০০গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে এবং তার চেয়েও বেশী


আবু জারীর রচিতঃ 
দারসুল হাদীস- মুসলিম হিসেবে জীবন যাপনের জন্য আল্লাহর ৫টি হুকুম মেনে নেয়া জরুরী পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘

আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।

No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।