ড. ইউসুফ আল কারযাভী : জীবনী সংক্ষেপ - আব্দুল কাদের তাপাদার - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

September 28, 2022

ড. ইউসুফ আল কারযাভী : জীবনী সংক্ষেপ - আব্দুল কাদের তাপাদার

আব্দুল কাদের তাপাদারঃ আধুনিক ইসলামি দুনিয়ায় বহুল পরিচিত যুগের ফকীহুল উম্মাহ, ইসলামের বহুমাত্রিক জ্ঞান গরিমায় সমৃদ্ধ মুসলিম উম্মাহর উজ্জ্বল তারকা ইন্টারন্যানাল মুসলিম স্কলার্স এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান,বহুগ্রন্হ প্রণেতা আল্লামা ড: ইউসুফ আল কারযাভী আজ দুপুরে কাতারের দোহায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন।

কাতারে অবস্থান করে তিনি সারা পৃথিবীতে ইসলামের, বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের অনেক খেদমত করে গেছেন। তাঁর মতো আধুনিক যুগের বাস্তববাদি ইসলামের সিপাহসালার আর কেউ ছিলেন না। যার হাত ধরে ইসলামের মৌলিক ধ্যান ধারণা বিস্তারিত হয়েছে অনারব সংস্কৃতি জগতেও।
আধুনিককালে তিনি ইসলামের এক জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে সারা মুসলিম দুনিয়ায় কোটি কোটি মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন এই আরব জাহানের সবচেয়ে আলোচিত মুজতাহিদ মুজাদ্দিদ। তাঁর হাতে গড়া অসংখ্য কালজয়ী ইসলামি স্কলার, আরব জাহানের গন্ডি পেরিয়ে সমস্ত অনারব দুনিয়ায় আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন।
আজীবন নিতান্ত মজলুম একজন ইসলামের দাঈ ও মুবাল্লিগ হিসেবে তাঁর অসাধারণ, অসামান্য ভূমিকা মুসলমানদের মধ্যে জাগরণের আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে গেছে।
ইসলামের পুনর্জাগরণে আল্লামা কারযাভির অনন্য ও সংগ্রামমুখর জীবন দিকে দিকে নতুন করে মুসলমানদের মধ্যে জাগরণের দীপ্ত আলোয় আলোকিত ভুবন তৈরি করবে। আধুনিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের তিনি একজন পরামর্শক ও গাইড ছিলেন। সবসময় এরদোগান তাঁকে চলার পথে এক বিশ্বস্ত অভিভাবক হিসেবে তাঁর পরামর্শ কাজে লাগাতেন।
বিশ্বের মুসলমানদের জন্য তিনি এক বড় নেয়ামত ছিলেন। মুসলিম শাসকদের তিনি ইসলামের আলোকে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। আল্লামা কারযাভির ইন্তেকাল মুসলিম দুনিয়ায় যে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে তা কোনোদিন কেউ পূরণ করতে পারবে না।
যিনিই গড়ে উঠেছেন, আপন কীর্তি ও কর্মে প্রোজ্জ্বল হয়েছেন, আর কিছু নয়, নিজের চেষ্টা-সাধনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই হয়েছেন। এমনই আপন কর্মে প্রোজ্জ্বল ও একজন সফল ব্যক্তিত্ব হলেন- মিসরীয় বংশোদ্ভূত আলেম শায়খ ড. আল্লামা ইউসুফ আল কারাজাভি। তিনি আজ কাতারের রাজধানী দোহায় ইন্তেকাল করেছেন। মিসরের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিনের (মুসলিম ব্রাদার হুড) সাবেক এ উপদেষ্টার বর্ণাঢ্য জীবনী সংক্ষিপে তুলে ধরা হলো।
মহান মনীষী শায়খ ড. ইউসুফ আল কারজাভি ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র দুই বছর বয়সে তার বাবা ইন্তেকাল করেন। ফলে তার লালন-পালনের দায়িত্ব পড়ে চাচার ওপর। শৈশব মিসরেই কাটান।
মাত্র ১০ বছর বয়সে শায়খ কারজাভি কুরআনে কারিমে হাফেজ হন। এরপর আল আজহার কারিকুলামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হন। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন শায়খ কারজাভি। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’-এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডিন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council-এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন । ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন শায়খ কারজাভি। মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের (International Union of Muslim scholars) সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
একই সাথে জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ডের সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিচার্জের (European Council For Fatwa and Research) প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদভিত্তিক সমাধানমূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার গ্রন্থগুলো প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, বোদ্ধামহল ও সাধারণ মানুষের কাছে সেগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। তার গ্রন্থ সংখ্যা অন্তত ১৭০টি। এইকসাথে নানা সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে দেয়া তার বয়ান-বক্তৃতার রেকর্ড মুসলিম উম্মাহর বিরাট পাথেয় হিসেবে উপকার করবে বহু দিন।
শায়খ ইউসুফ কারাজাভি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরস্কার লাভ করেন। ইসলামী শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নানা পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন।
তার অন্যতম কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার : এক. কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ। দুই. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পদক, মালয়েশিয়া। তিন. আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন সম্মাননা পুরস্কার, দুবাই। চার. সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ সম্মাননা, ব্রুনাই। পাঁচ. আল-ওয়াইস পদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ছয়. জর্ডানের মেডেল অব ইন্ডিপেন্ডেন্স ইত্যাদি।
ইখওয়ানুল মুসমিমিনের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তাকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়। প্রথমবার ১৯৪৯ সালে রাজকীয় আমলে। এরপর প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুন নাসেরের আমলে তিনবার। ১৯৫৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবার। একই সালের নভেম্বর মাসে দ্বিতীয়বার। এবার তিনি ২০ মাস কারাগারে কাটান। শেষবার ১৯৬৩ সালে।
মিসরীয় জাতিসত্ত্বার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও শেষ জীবনের বড় একটি অংশ শায়খ কারজাভি কাতারে বসবাস করেছেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণেই দেশ ত্যাগে বাধ্য হন তিনি। ২০১৫ সালে মিসরের একটি আদালত শায়খের অনুপস্থিতিতেই তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ জারি করে। এর আগে ১৯৬১ সালে তিনি প্রথম বারের মতো কাতারে পাড়ি জমান।
শায়খ কারজাভি দুইটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী মিসরীয়। তার নাম ইসআদ আব্দুল জাওয়াদ (উম্মে মোহাম্মদ)। তাকে বিয়ে করেন ১৯৫৮ সালে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার তিন মেয়ে (ইলহাম, সিহাম, উলা ও আসমা) ও চার ছেলে (মোহাম্মদ, আব্দুর রহমান ও ওসামা) জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আয়েশা। তিনি মরক্কান বংশোদ্ভূত।
শায়খ কারজাভি আজ সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর/২৯ সফর) দুপুরে কাতারের রাজধানী দোহায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
(সূত্রঃআলজাজিরা, আলআরাবিয়া, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য)
আল্লাহ তাআলা তার খেদমতগুলো কবুল করুন। তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু মাকামে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করুন। আমিন।
লেখকঃ আব্দুল কাদের তাপাদার প্রতিযশা সাংবাদিক, সহ সভাপতিঃ সিলেট প্রেসক্লাব।

আল্লামা ইউসুফ আল ক্বারদাভীকে নিয়ে আমার প্রিয় বাংলা বইয়ের যত আয়োজন
ডঃ ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ আলক্বারাদাওয়ীর ইন্তেকাল – ড. এম. আব্দুস সালাম আযাদী আল্লামা ইউসুফ আল কারদাভীর ইনতিকাল - বাংলাভাষীদের শোক ড. ইউসুফ আল কারযাভী : জীবনী সংক্ষেপ - আব্দুল কাদের তাপাদার ড. ইউসুফ আল-কারজাভি - শাইখুল আজম আবরার ডঃ ইউসুফ আলক্বারাদাওয়ীকে নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার– ড. এম. আব্দুস সালাম আযাদী আল্লামা ইউসুফ আল কারদাভী এর বই সমূহ

📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘

আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।


No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।