বই নোট - ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ-শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

November 16, 2025

বই নোট - ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ-শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী

 


বই নোটঃ ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ

লেখক : শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী

(১৯৮৫ সালে রাজশাহী মহানগরীর দায়ীত্বশীল কর্মীদের শব্বেদারীতে প্রদত্ত বক্তব্য এই আকারে প্রকাশ করা হয়)

 

ইনফাকের অর্থঃ

§ ইনফাকের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থঃ ইনফাক শব্দটি মূল ধাতু (نفق) যার অর্থ সুড়ঙ্গ, যার একদিক দিয়ে প্রবেশ করলে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যায়।

§ মুনাফিক ও নিফাকে শব্দটি মূলত একই ধাতু থেকে গঠিত।

§ শাব্দিক অর্থের আলোচনায় আমরা ইনফাকের দুটি অর্থ পেয়ে থাকি:

. এ পরিমাণ খরচ করতে হবে যাতে অর্থ জমা করার সুযোগ না আসে বা দাতার মনে সঞ্চয় এর ধারণা বদ্ধমূল হাওয়ার সুযোগ না আসে।

. ভারন পোষণ বা খোরপোষের তাৎপর্য হল দাতা যার জন্য দান বা খরচ করবে তার প্রয়োজন পুরণ করার মত অর্থ অবশ্যই ব্যয় করবে।

 

ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর অর্থঃ

ইনফাক অর্থ এবং ফি সাবিলিল্লাহ এর অর্থ একত্রে মিলালে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ দাড়ায় ¬জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রয়োজন পুরণ, এর উপায় উপকরণ যোগাড় ও এই মহান কাজ পরিচালনার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য অর্থ সম্পদ খরচ করা চাদার মনোভাব নিয়ে অর্থ দান করার মাধ্যমে এর হক আদায় হতে পারে না। তাই ইসলামী আন্দোলনের অর্থ নৈতিক সহযোগীতার ব্যাপারে "এয়ানত“ ব্যাবহার করা হয়।

 

ইনফাকের তাৎপর্যঃ

§ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার খাতে আমাদেরকে মাল বা সম্পদ ব্যয় করতে হবে কেন?

আল্লাহ তায়ালা তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য তার পথে জিহাদের যে আহবান দিয়েছেন তার মধ্যেই উপরের প্রশ্নটির উত্তর রয়েছে "তোমরা জিহাদ কর জান ও মাল দিয়ে।“ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে জানের কুরবানি ও মালের কুরবানী আবশ্যক। এই দুটি জিনিস কুরবানির মাধ্যমে কুরবানী দেওয়ার মত একদল মুমিন, মুজাহিদ তৈরী হলেই দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম বিজয়ী হবে। আল্লাহর দ্বীন দ্বীন কায়েম এর মহান সংগ্রাম দাবি করে যে এই সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সৈনিকগণের কাছে তাদের নিজের জান ও মালের তুলনায় ইহজাগতিক স্বার্থ-লোভ লালসার তুলনায় আল্লাহর সন্তুষ্টিই আসল।

 

ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর ক্ষেত্রে রাসুল (সঃ)-এর ভূমিকা

§ নবুয়তের ঘোষনা আসার পূর্ব পর্যন্ত রাসুল সা. আরবের অন্যতম ধনী হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু নবুয়াত আসার পর থেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত তাঁর সম্পদ বাড়ে নাই বরং কমে গিয়েছে।

 

ইনফাকের ক্ষেত্রে সাহাবী রা. গণের ভূমিকাঃ

রাসুল সা. এর নেতৃত্বে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করার বা হওয়ার ক্ষেত্রে সাহাবী রা. এর ভূমিকা ইতিহাসে চিরকাল স্মরনীয় হয়ে থাকবে। তারা রাসুল সা. এর ডাকে সাড়া দিয়ে জান ও মালের কুরবানী পেশের ক্ষেত্রে নজির বিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের এই ভূমিকার জন্য আল্লাহ তাদের সার্টিফিকেট দিয়েছেন, "তাদের প্রতি আল্লাহ খুশি ও তারাও আল্লাহর প্রতি খুশি।“

 

যে সকল সাহাবী (রা) এর ভূমিকা বেশী উল্ল্যেখযোগ্যঃ

§ হযরত খাদিজা (রা)

§  হযরত আবুবকর (রা)

§ হযরত ওমর (রা)

§ হযরত উসমান (রা)

§ হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ

§ অন্যান্য মুহাজির ও আনসার সাহাবিগণ

 

বর্তমানে ইসলামী আন্দোলনের ও প্রতিপক্ষ ও তাদের প্রস্তুতিঃ

ইসলামী আন্দোলনের যথার্থ প্রস্তুতি নিতে হলে বর্তমান যুগ সন্ধিক্ষণে এ আন্দোলনের প্রতিপক্ষ সঠিক ভাবে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের প্রস্তুতি সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে ইসলামী আন্দোলন বর্তমানে যে দেশেই পরিচালিত হয় না কেন তাদের প্রধান পরাশক্তি শত্রু হল আমেরিকা ও রাশিয়াদ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিপক্ষ হল এই দুই পরাশক্তির বলয়াধিন রাষ্ট্র শক্তি ও রাজনৈতিক শক্তি সমূহ। এর সাথে বাংলাদেশের জন্য একটা বাড়তি ঝামেলা ও প্রতিপক্ষের শক্তি হিসাবে আছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। এই প্রতিপক্ষ সমূহ সার্বিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে দুনিয়ায় ইসলামের জনজাগরণ ঠেকানোর জন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তাদের নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে মত পার্থক্য থাকলেও ইসলামের ইস্যুতে প্রায় সর্বত্র তারা এক ও অভিন্ন ভূমিকা পালন করে আসছেগ্লোবাল স্ট্যাটেজির কারণে কোথাও কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সেটা বাহ্যিক। মূলে ইসলামী পুনর্জাগরণ ও আন্দোলনকে ঠেকানোর জন্য তাদের শৈথিল্য নেই। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাদের প্রচার মাধ্যম সমূহ ইয়াহুদীদের সহায়তায় ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে বিশ্ব জনমতকে প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুসলিম প্রধান দেশ সমূহতে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে বুদ্ধিজীবী ও নেতৃস্থানীয় লোকদের তাদের গোলামে পরিণত করেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে প্রশাসনকে পর্যন্ত ব্যাবহার করছে NGO নামের প্রতিষ্ঠান দিয়ে সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আমাদের স্বকীয় মূল্যবোধ ধ্বংসের প্রয়াস করছে সেই জালে বুদ্ধিবৃত্তিক ও বস্তুগত সহযোগিতা দিয়ে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে এবং এই সকল মিলিত শক্তি ইসলামী আন্দোলনের উপর সরাসরি আঘাত করার ব্যাবস্থা করেছে।

 

ইসলামের অর্থ ব্যয়ের বিভিন্ন দিক:

ইসলামের বাস্তব কাজ যেহেতু আল্লাহর কাছে জান ও মাল সোপর্দ করার। ইসলামের বাস্তব কাজ যেহেতু আল্লাহর ইবাদাত ও বান্দার সেবা করা, যেহেতু মুসলিম সমাজের বিভিন্ন দিকে ও বিভাগে অর্থব্যয়ের প্রবনতা ঐতিহ্যগত ভাবেই প্রাধান্য পেয়ে আসছে। 'পদী মারা গেলেও রেখা থাকে" এই প্রবাদ বাক্যের মতই মুসলিম সমাজ তার নিজস্ব মূল্যবোধ প্রায় হারিয়ে ফেললেও তাদের অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি।

 

ইসলাম অর্থ সম্পদ কুরবানীর দুই ধরনের ব্যাবস্থা রেখেছে একটা বাধ্যতা মূলক, যেমন: যাকাত অপরটি ইচ্ছামূলক, যেমন: গরীর নিকট আত্মীয় স্বজন, অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগীতা করা। কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন: মাদ্রাসা মসজিদ প্রভৃতি কায়েমে কারো অর্থ ব্যয় করা।

§ বাধ্যতামূলক দান অর্থাৎ যাকাত এর যে আটটি খাত রয়েছে তার মধ্যও ফি সাবিলিল্লাহ একটা খাত আল্লাহ রেখেছেন।

§ মানুষ নিজ ইচ্ছায় যে দান করে তার মধ্যেও ফি সাবিলিল্লাহ খাত বা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে অর্থব্যয় এর সুযোগ রয়েছে।

§ কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিচার করলে দেখা যায় আল্লাহর পথে জিহাদ হল সবচেয়ে বড় আমল অর্থাৎ সর্বোত্তম আমলের জন্য ব্যয় হল সর্বোত্তম ব্যয়-এটাই সাভাবিক।

§ যে দেশে আল্লাহর দ্বীন কায়েম নেই সেখানে যাকাতের আটটি খাতের ব্যায় থেকেও ফি সাবিলিল্লাহ এর ব্যয় অন্যতম। কারণ দ্বীন কায়েম না হলে যাকাতের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

 

ইনফাকের ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের ঐতিহ্য:

§  ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্নমুখী ঐতিহ্য সৃষ্টিতে পধানত অবদান রেখেছেন নবী ও রাসুলগন। এরপর আল্লাহর সেই সব বান্দাদের ভূমিকা স্মরণযোগ্য যাদের আল কুরআনে সিদ্দিকীন, সালেহীন এবং শাহেদা নামে অবহিত করা হয়েছে।

§ নিকট অতীতে আমাদের উপমহাদেশে হযরত সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী পরিচালিত মুজাহিদ আন্দোলনের কথা আমাদের মনে থাকার কথাএই আন্দোলনে মানুষ যেমন পায়ে হেটে যোগদান করেছে, তেমনি তাদের অর্থনৈতিক কুরবানির কথা চিরস্মরণীয়।

§ বর্তমান বিশ্বের দু‘টি সংগঠন জামায়াতে ইসলামী  ও মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিন এর সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সাহাবী (রা) এর ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা কবার প্রয়াস পাচ্ছেন।

§ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদী সাহেব তিনার লেখা অসংখ্য বইসমূহ থেকে কয়েকটির আয় পরিবারের জন্য রেখে বাকিগুলো সংগঠনের জন্য বয় করেছেন, ওয়াকফ করে দিয়েছেন



No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।